জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সড়কের দু’ধারে সারি সারি আমবাগান ও সুস্বাদু আমের কথা উঠলেই সবার আগে চলে আসে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম।
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগাছে এখন মুকুলের সমারোহ। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোতে এবার বাম্পার মুকুল এসেছে। বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের। সবকিছু ঠিক থাকলে জেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। দিন দিন আম চাষে জমির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
জেলায় শতাধিক জাতের আম চাষ হয়। এর মধ্যে সুস্বাদু গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, ফজলী, আম্রপালি, আশ্বিনা, খিরসা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ জাতের আমই বেশি চাষ হচ্ছে।
মাঘ মাসের শুরুর দিক থেকেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোতে। ফাল্গুনের প্রথম পর্যায়ে এসে মুকুলে মুকুলে পরিপূর্ণ হয় গাছগুলো। এরই মধ্যে গাছগুলোতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছেন চাষীরা। এখন প্রতিটি বাগানে চলছে সেচ দেয়ার কাজ। কোনো কোনো গাছে আমের দানা বাঁধতেও শুরু করেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জেলার অধিকাংশ গাছ মুকুলিত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত জেলার প্রায় ৮৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার গতবারের তিন লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নয়াগোলা এলাকার আম ব্যবসায়ী অলিউজ্জামান রুবেল জানান, বাগানের অধিকাংশ গাছে এরই মধ্যে মকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। এবার কুয়াশা কম থাকায় মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। একই ইউনিয়নের তেররশিয়া গ্রামের আম চাষি কাসেদ আলি বলেন, আম বাগানে এবার আগেভাগে মুকুল এসেছে। এখন আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সলেহ আকরাম জানান, গত বছর আমের ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আমচাষি ও বাগান মালিকরা আম বাগানের অতিরিক্ত যত্ম নিয়েছেন। ফলে এ বছর আমের মুকুলের পরিমাণ বেশি। ইতিমধ্যে ৮৫ শতাংশ আম গাছেই মুকুল এসেছে। গাছে গাছে অজস্র মুকুল দেখে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমের মুকুল আসার আগে-পরে যেমন আবহাওয়ার প্রয়োজন, এ বছর তা বিরাজ করছে। কুয়াশা কম এবং আকাশে উজ্জ্বল রোদ থাকায় আমের মুকুল সস্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণেই এবার আগেভাগেই আম গাছে মুকুল এসেছে। আমচাষি ও বাগান মালিকরা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা আর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদন বাড়ছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/কেটি