নিজস্ব প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : ধরলা নদীর এক চরের না মাধবরাম। যেখানে ফসল ফলানো কষ্টসাধ্য, সেই রূপালী চরে সোনালী হাসি হাসছে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। প্রতিবছর এসব চরে সীমিত পরিসরে সূর্যমুখী চাষ হলেও এবছর তা বেড়ে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। সূর্যমুখীর আবাদ দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রংপুর বিভাগের (নিজ বিভাগ) চরাঞ্চলে উৎপাদিত সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন দেখতে ছুটে আসেন খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর মাধবরাম গ্রামে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে এসে ধরলার চরে সূর্যমুখীর খেত পরিদর্শন করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামরবাড়ী সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বেড়েছে। গত বছর জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হলেও এবছর তা ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এতে প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যে সূর্যমুখী বীজ বিক্রির আশা করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতি হেক্টরে দুই মেট্রিক টন সূর্যমূখী তেল বীজ উৎপাদন হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার তেল বীজ বিক্রি হবে বলে কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, বর্তমানে প্রতি কেজি সূর্যমুখী তেল বীজের দাম ৮০ টাকা। সে হিসেবে এবার জেলায় কমপক্ষে ৩২ কোটি টাকার সূর্যমুখীর তেলবীজ বিক্রির আশা কৃষকদের। জেলা কৃষি বিভাগের মতে, ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলায় চার শতাধিক চর রয়েছে।
তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রের চরে সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণ করে চরের কৃষকের ভাগ্য বদলানোর পাশাপাশি দেশের আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেলের অনেকটাই যোগান দেওয়া সম্ভব। চরের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে একদিকে যেমন আয় হবে তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাদের। অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা।
সূর্যমুখী চাষ পরিদর্শন শেষে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, সরকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে এই অঞ্চলসহ সারাদেশে সূর্যমুখী ও অন্যান্য শস্য উৎপাদনে ব্যাপক কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্য দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে, যাতে কৃষকরা আরও আগ্রহী হন। এই ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রাজস্ব ফলোআপ ও প্রণোদনা কর্মসূচি-২০২১ এর আওতায় সূর্যমুখী আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষে কুড়িগ্রামে মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার আব্দুল ওয়াহেদ, কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক প্রমুখ।
সান নিউজ/মিজান/এসএ