নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : নরসিংদীর পলাশে পানির ব্যবস্থা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিপর্ণূ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ২৫টি ঘরে প্রবেশ করতে পারছেন না দলিল পাওয়া ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ প্রকল্প ভূমিহীনদের ভূমিসহ বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অংশ হিসেবে সরকারের খাস জমি উদ্ধার করে তাতে ঘর তৈরি করে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে গত ২৬ ডিসেম্বর নরসিংদীর পলাশে ২৫টি ঘরের দলিল আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এরমধ্যে জিনারদী ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামে ২১টি ঘর এবং চরসিন্দুর ইউনিয়নের কাউয়াদি গ্রামে ৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়।
দলিল আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও পানির ব্যবস্থা ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ঘরগুলো এখনো বসবাসের অযোগ্য। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েও তাতে উঠতে পারছেনা বরাদ্দ পাওয়া ভূমিহীনরা।
সম্প্রতি জিনারদী ইউনিয়নের মাঝেরচরে অবস্থিত এই প্রকল্প সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খোদজা বেগম ও তার মেয়ে রুনা একটি ঘরে টুকটাক কাজ করছেন। তারা কি করছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ঘরে না উঠলে চাবি নিয়ে যাবে এই ভয়ে কিছু আসবাবপত্র ঘরে তুলছেন। এখানে বসবাস করছেন কিনা জানতে চাইলে খোদেজা বেগম জানান, এখানে পানির ব্যবস্থা নাই, এছাড়া অনেক টয়লেটের টাঙ্কি স্থাপন না করায় বসবাস করতে সমস্যা হবে তাই এখনো বসবাস করি না।
এই প্রকল্পের ১ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন কাজল নামে এক ব্যক্তি। তিনি জিনারদী ইউনিয়নের টেঙ্গরপাড়া গ্রামের সাহাজ উদ্দিনের ছেলে। তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করেন। তিনি এখানে ঘুরাফেরা করছেন। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে না উঠলে চাবি নিয়ে যাবে এই হুমকিতে এখানে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে ঘরটি রক্ষায় কাজ করছেন। তিনিও জানান, পানির পাম্প বসিয়েছেন ঠিকই কিন্তু পানির সরবরাহ না থাকা এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাটি পরিপূর্ণ না হওয়ায় বসবাস করা সম্ভব নয়। তাই এখানে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।
এখানে ৩ শতাংশ জায়গাসহ আরেকটি ঘর পেয়েছেন মো. লাল মিয়া নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সংগ্রাম শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে দেখেন তার জমিতে স্কুল ঘর উঠেছে। তাই তিনি নিজ জায়গা স্কুলকে দিয়ে পলাশে এসে ভবঘুরের মতো বসবাস করতে থাকেন। অবশেষে সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে একটি মাটির ঘর ভাড়া নিয়ে উঠেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর এই ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে দলিল হস্তান্তরের দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও পানির ব্যবস্থা না থাকা ঘরগুলোতে বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তার বড় ছেলে। তিনি দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য অনুরোধ জানান। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ঘরগুলো তৈরি করেছেন তা যেনো কাজে আসে।
একই অবস্থা চরসিন্দুর ইউনিয়নের কাউয়াদি গ্রামে নির্মিত ৪টি ঘরের। সেখানেও দু-একটি পরিবার চাবি নিয়ে যাবে এই ভয়ে উঠেছিলো কিন্তু পানির ব্যবস্থা না থাকায় সকলে উঠতে পারছে না। এমনই কথা জানিয়েছেন চরসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় এক ওয়ার্ড মেম্বার।
এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিন জানান, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কেউ এই প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতে অনিহা প্রকাশ করলে চাবি ফিরিয়ে নেওয়া হবে। আর প্রকল্পে সমস্যা থাকার কথা নয়। যদিও থেকে থাকে তাহলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
সান নিউজ/এসআই/কেটি