নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রূপালী চত্বর থেকে সেই সভামঞ্চটি গুটিয়ে নিয়েছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুপ্রভাত চাকমাসহ পুলিশ সেখানে গেলে তিনি মঞ্চটি সরিয়ে নেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র হিসেবে আবদুল কাদের মির্জা শপথ গ্রহণের পরদিন থেকে মঞ্চটি তৈরি করে সেখানে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে আসছিলেন। এছাড়াও জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের আগে এবং পরে আরও বেশ কয়েকবার একই স্থানে তিনি অস্থায়ী মঞ্চে সভা-সমাবেশ করেন। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে প্রশাসনের নির্দেশে কাদের মির্জার লোকজন সভামঞ্চটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এ সময় কাদের মির্জা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মঞ্চ খোলার দৃশ্য দেখে হতাশা ব্যক্ত করে একপর্যায়ে নিজ অনুসারীদেরকে মঞ্চ থেকে ব্যানার খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কাদের মির্জা বলেন- যাও যাও। মেরে ফেলুক, ধরে ফেলুক। চলে যাও-চলে যাও।
স্থানীয় সাংবাদিক শরফুদ্দিন শাহীন জানান, এই মঞ্চ থেকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা নিজ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপি এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার এসব বক্তব্য দেশব্যাপী নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে রূপালী চত্বরে তৈরি মঞ্চে সভা-সমাবেশ করে আসছিলেন কাদের মির্জা। এই মঞ্চ থেকেই তিনি দলীয় নেতাকর্মী, মন্ত্রী, এমপি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তোলেন।
ওসি মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, রূপালী চত্বর নামে পুরো জায়গাটা বাজারের ভেতর সড়কের ওপর। সেখানে সভা-সমাবেশ হলে জনচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাদের মির্জাকে মঞ্চটি সরিয়ে নিতে বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও তিনি শোনেননি। গত সোমবার ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সেখানে সভা করার চেষ্টা করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সভামঞ্চের কাছ থেকে সরে যাওয়ার পর তিনি বার বার সেখানে সভা করার চেষ্টা করেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতেও আইনশৃঙ্খালা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় বসুরহাটে কাউকে সভা-সমাবেশ না করার আহ্বান জানায় প্রশাসন। প্রশাসনের এই আহ্বান উপেক্ষ করে কাদের মির্জা বার বার সভাস্থলে তার লোকজনকে জড়ো করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুপ্রভাত চাকমাসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তিনি মঞ্চটি সরিয়ে নেন।
জনচলাচলের জায়গায় এ ধরণের মঞ্চ করা বেআইনি উল্লেখ করে ওসি বলেন, আর কেউ যাতে নতুন করে মঞ্চ তৈরি করতে না পারে সেদিকে আমাদের নজরদারি থাকবে।
এদিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, দলীয় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে এ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও কেউ কোনো ধরনের রাজনৈতিক উসকানিমূলক স্ট্যাটাস বা বক্তব্য দিতে পারবে না।
সান নিউজ/এসএম