স্বপন দেব, মৌলভীবাজার : শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি সর্বস্তরের বাঙ্গালী গভীর শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক নিবেদন করেন। এদিনটি গৌরবময় বাঙালি জাতির রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের একটি বৃহৎ অধ্যায়।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, জেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। দিবসটির ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে অবগত করা হলেও জেলার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিগত সময়ে একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ৫০টি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিদ্যালয়ে নিজস্ব শহীদ মিনার নেই। মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় সবচেয়ে কম শহীদ মিনার রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। অন্যদিকে মোট বিদ্যালয়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি রয়েছে কুলাউড়া উপজেলায়।
মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, বড়লেখা, রাজনগর, এবং জুড়ী উপজেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৯১টি শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইফতাখায়ের হোসেন ভূঞা বলেন, কুলাউড়া উপজেলায় ১৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮০টিতে শহীদ মিনার রয়েছে।
অবশিষ্ট তিনটি স্কুলে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ চলছে। তবে এজন্য কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম জাকিরুল হাসান বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৮টি। এর মধ্যে আমাদের শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ১৮টি। সম্প্রতি দুই ইউনিয়নে দুটি শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, মোট ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়। এর মধ্যে ৮৭টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে আগামীতে শহীদ মিনার নির্মিত হবে।
বড়লেখা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিজ মিয়া বলেন, বড়লেখা উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৫১টি। এর মধ্যে ৪৭টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকিগুলোতে নেই।
রাজনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জাফর আল সাদেক বলেন, আমাদের উপজেলায় ১৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২২টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এগুলো সবকটায় স্থানীয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীপর্যায়ে করা।
মৌলভীবাজার সদরের উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোতাহার বিল্লাহ বলেন, আমাদের সদর উপজেলায় ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। তবে বাহাদুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি নির্মিত দুটি শহীদ মিনার ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হচ্ছে।
জুড়ীর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাজন কুমার সাহা বলেন, জুড়ী উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৩টি। এর মধ্যে ৪০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান সহ এলাকার বিত্তশালীরা একত্রিত হয়ে নিজ নিজ এলাকার শহীদ মিনারগুলো নির্মাণ করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শামসুর রহমান বলেন, পর্যায়ক্রমে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ বা স্থানীয়ভাবে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন। নিজ উদ্যোগে অনেকেই নিজ নিজ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে আমাদের সহযোগিতা করছেন।
সান নিউজ/এসকেডি/এনকে