নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : নির্মাণের বয়স ২৮। তবে দু‘বছর ধরে ফুলেল শ্রদ্ধা হচ্ছে না শহীদ মিনারটি। ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসের দিনে রোববার ২১ ফেব্রুয়ারিও কোনও ফুল পড়েনি শহীদ মিনারটির বুকে। যদিও শহীদ মিনারটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো (চবি) দেশ সেরা বিদ্যাপীঠের।
এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই চবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। তাদের আক্ষেপ শহীদ মিনার নিয়ে নয়, মিনারে ফুল দিতে না পারা নিয়ে। তাদের অভিযোগ, শহীদ মিনারটি পাকিস্তানের জাতীয় স্মৃতিসৌধ মিনার-ই-পাকিস্তানের আদলে তৈরি। তাই এই শহীদ মিনারে ফুল দিতে রাজী নন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কেউ।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল যে পাকিস্তান, সেই পাকিস্তানের শহীদ মিনার আমাদের ক্যাম্পাসে। তাও আবার ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের সঙ্গে। বিষয়টি মোটেও মানার মতো নয়। আমরা চাই প্রশাসন শিগগির এর একটা বিহিত করুক।
চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, শহীদ মিনার নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ২০১৯ থেকে। যদিও শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে। ১৯৬৬ সালে ৪টি ইটের স্তম্ভে নির্মিত চবির কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়ার পর এই শহীদ মিনার তৈরি করা হয়।
প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো মা ও সন্তানের প্রতীক। মা তার শহীদ সন্তানদের নিয়ে দন্ডায়মান। মা তার সন্তানদের অনন্তকাল ধরে রক্ষা করছেন। আর যারা এই মায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের আশীর্বাদ করছেন মা।
সন্তানদের আত্মত্যাগের মহিমায় মা ঝুঁকে পড়েছেন একটু স্নেহে। আর ৪টি সন্তানের মধ্য দিয়ে তিনি তার লক্ষ-কোটি সন্তানকে দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত এই শহীদ মিনারের কোনও মিল নেই।
এটির নকশার সঙ্গে মিল রয়েছে পাকিস্তানের লাহোরের ইকবাল পার্কে অবস্থিত মিনার-ই-পাকিস্তানএর। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিতর্কের সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরে শিক্ষার্থীরা ওই শহীদ মিনার অপসারণের দাবি জানালে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর ২০১৯ সালের ১ মার্চ চবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের আদলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শহীদ মিনারটির উত্তর-পূর্ব পাশে নতুনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ওই সময় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারও উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান শহিদ মিনারটি পুরোপুরি না ভেঙে নকশা ও স্থান সংকুচিত করে এটির উপরে জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছিল বিজয় স্তম্ভ।
কিন্তু দুই বছরেও শুরু হয়নি প্রকল্পের কাজ। আবার বিতর্কিত হয়ে পড়ায় এই শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদনও করা হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবির প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ হোসেন বলেন, টেন্ডার জটিলতায় আটকে আছে এটি। আমরা এই প্রকল্পের টেন্ডারের অপেক্ষায় আছি। টেন্ডার হলেই কাজ শুরু হবে। টেন্ডার হতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।
চবির উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনও শহীদ মিনার নেই, তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে নতুন শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের বাজেট এখনও আসেনি। বাজেট আসলেই এটির কাজ শুরু হবে।
সান নিউজ/খলিল/এসএ