নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : রাস্তার দুই ধার দিয়ে সারিবদ্ধ করে লাগানো আছে নিমগাছ। ৫-৬ মাস আগেও গাছগুলোতে ছিল সবুজ পাতা, গাছের নিচে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতেন রাস্তার দুই ধারের ফসলী জমির কৃষকরা।
কিন্তু হঠাৎ করে অজ্ঞাত রোগে গাছের পাতা ঝরতে শুরু হয় গত কয়েক মাস আগে। এখন ২২ বছর বয়সী মাঝারি সাইজের নিমগাছগুলো পাতাবিহীন অবস্থায় মরে শুধু দাঁড়িয়ে আছে।
প্রকৃতির সবচেয়ে নির্মল অক্সিজেনের জোগানদাতা নিমগাছের এমন করুণ দশা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সালালপুর থেকে আমলাইন গ্রামের মধ্যবর্তী রাস্তার দুই পাশে। অজানা রোগে গাছগুলো এভাবে মারা যাওয়ায় হতাশ স্থানীয়রা।
গোমস্তাপুর সদর ইউনিয়নের রানিবাড়ি-চাঁদপুর গ্রামের রিফাত আলী বলেন, কয়েক মাস ধরে পেয়ারার জমিতে কাজ করার কারণে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। এখন রাস্তার পাশের নিমগাছগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, সবগুলো মরে যাচ্ছে। গাছগুলোর সঠিক পরিচর্যা করা উচিত ছিল যথাযথ কর্তৃপক্ষের।
খলসী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করে। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে থেকে হঠাৎ করে গাছগুলো মরতে দেখা যাচ্ছে। কী কারণে মরছে এলাকার কেউ বলতে পারছে না। আমরা চাই, গাছগুলোর রোগ নির্ণয় করে সঠিক পরিচর্যা করা হোক।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এভাবে মারা যাচ্ছে নিমগাছগুলো, এমনটাই দাবি স্থানীয় কৃষক মোতাহার আলীর। তিনি বলেন,‘সম্ভবত শিকড় নষ্ট হওয়ার কারণেই ১০-১২ বছর বয়সী মাঝারি সাইজের গাছগুলো মরতে পারে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ সব ব্যাপারে খুব একটা সচেতন নয়।’
নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত সচিব হাবিবুল্লাহ্ জানান, ১৯৯৮ সালের বন্যার পর আমলাইন থেকে সালালপুর রাস্তার দুই ধারে ইউনিয়ন পরিষদ নিমগাছের বীজ বপন করে। সাবেক প্রয়াত চেয়ারম্যান ইসরাইল হক ৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর রাস্তার দুই ধারে একবস্তা নিম বীজ বপন করেন।
প্রায় হাজার খানেক গাছ এখন মাঝারি সাইজে পরিনত হয়েছে। তবে গত কয়েকমাস আগে থেকে হঠাৎ অজানা কোনও রোগে সবগুলো গাছ মরতে শুরু করেছে। প্রথমে পাতা ঝরছে, পরে পুরো গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদির আহমেদ ভুলু জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা একটি বিষ প্রয়াগের কথা জানিয়েছেন। তবে বিষে কাজ হবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। কারণ, এখানকার মাটি ভালো না। মাঝারি সাইজের হয়েও গাছগুলো কোনো কাজে আসলো না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে নিমগাছগুলো মরতে পারে। যেমন, উইপোকার আক্রমণ, মাটির দোষ। এমনকি অজানা নতুন রোগেও এমন হতে পারে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/জাহিদ/এসএ