আবুল কালাম, ময়মনসিংহ : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ফার্টিলাইজার রিকমান্ডেশন গাইড আপডেট করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সারাদেশকে ৩০ টি এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোনে ভাগ করে কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনটি ইকোলজিক্যাল জোনে কাজ করছেন বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা।
কৃষি জমিতে সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার করে কৃষক যেন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ফসল উৎপাদন করতে পারে সে উদ্দেশে সরিষা ও গম ফসলে সালফার, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরনের ক্রিটিক্যাল লিমিট নির্ধারণ বিষয়ে পিবিআরজি, বিএআরসি, এনএটিপি ফেজ-২ প্রকল্পের আওতায় বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ।
ময়মনসিংহে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এ লক্ষ্যে তেঁতুলিয়া ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় কৃষকের জমিতে মাঠ পরীক্ষণ প্লট স্থাপন করা হয়। গবেষণায় মাটিতে মাইক্রো নিউট্রিয়ান্টের (যে সমস্ত খাদ্য উপাদান ফসলের জন্য খুব অল্প পরিমাণে লাগে) ঘাটতি পাওয়া গেছে এবং বোরন সার ব্যবহারের ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া গেছে।
প্রকল্প পরিচালক বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আবেদিন জানান, বাংলাদেশের মাটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। মাটিতে প্রথমে নাইট্রোজেনের অভাব ছিল তারপর ফসফরাস ও পটাশিয়ামের অভাব। এখন বোরনের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
এটা অত্যাবশ্যক কিন্তু পরিমাণে খুব কম লাগে। সঠিক মাত্রায় বোরনের ব্যবহারের ফলে ফসলের দানাটা পুষ্ট হয়। হেক্টর প্রতি ২/৩ কেজি লাগে। এটা ব্যবহার করলে দৃশ্যমান ফল পাওয়া যায়। প্রথমে মাটি পরীক্ষা এবং পরে ল্যাব পরীক্ষার পর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষায়ও একই রকম ফলাফল পাওয়া গেছে। বোরন ব্যবহার করা জমির সরিষার ফলন ও দানা ভালো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ রিসার্স কাউন্সিল এটি বাস্তবায়ন করছে। সার সুপারিশমালা যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তৈরি সার সুপারিশমালা আপডেট করতে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে। নতুন তথ্য সম্বলিত হবে এবং সারের যে পরিবর্তন সেটা সমন্বিত হবে। এটা থেকে কৃষক উপকৃত হবেন।
বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন সুমন বলেন, জমিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের ঘাটতি হয়, এটা কৃষকরা জানেন এবং তা ব্যবহার করেন। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে ফসলে মাইক্রো নিউট্রিয়ান্টের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
এর ঘাটতি থাকলে ফসলের জীবনচক্র পরিপূর্ণ হয় না। একটা পর্যায়ে এসে তা থেমে যায়। সরিষা ও গমের পরীক্ষণ মাঠের তারতম্য দেখা গেছে। যেখানে মাইক্রো নিউট্রেন্টের অভাব আছে, সেখানে দানা পুষ্ট হয়নি। বোরন সার প্রয়োগ করে মাইক্রো নিউট্রেন্টের ঘাটতি পুরণ করা হয়েছে সেখানে দানা পুষ্ট হয়েছে।
বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি ফেলো রুবিনা ইয়াসমিন জানান, সরিষা এবং গমে বোরন সারের প্রয়োগ এ কাজ করা হচ্ছে। তিন বছরের গবেষণায় ফসলে সালফার, বোরন ও ম্যাগনেশিয়াম পুষ্টি উপাদানের ক্রিটিক্যাল লিমিট এবং মাটির উর্বরতা অনুয়ায়ী সারের সঠিক মাত্রা নির্ণয় করা গেছে।
সান নিউজ/একে/এনকে