নিজস্ব প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও প্রকট হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়িয়ে রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকা দখলের চেষ্টা করেছে।
এসময় তারেক নামের এক শ্রমিককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে বিক্ষুব্ধরা। পাশাপাশি আন্দোলনের ছবি তুলে কটুক্তিমূলক মন্তব্য করা এবং পরিচয়পত্র দেখাতে না পারায় স্থানীয় পত্রিকার এক ফটোগ্রাফারকেও মারধর করেছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে জল কামান প্রস্তুত রেখেছে পুলিশ।
তবে সড়ক অবরোধের কারণে বরিশাল-পটুয়াখালীসহ অভ্যন্তরীণ মহাসড়কে এখন যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র এ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলতে দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে মহাসড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটারজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গভীর রাতে মেসে ঢুকে ১১ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা এবং মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল ৬টা থেকে সড়ক অবরোধ শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রথমে তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে বাঁশ, গাছের গুড়ি, টায়ারে অগ্নিসংযোগ এবং পাথরভার্তি একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিক্ষোভ সদর অবরোধের পাশাপাশি হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ সুষ্ঠু বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করে।
পরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও প্রকট আকার ধারণ করতে শুরু করে। তার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থাকা বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির কুয়াকাটা এক্সপ্রেস নামক একটি বাস ভাংচুর করে। একই সময় বেশ কয়েকটি মাহেন্দ্রও ভাংচুর করা হয়। এরপর দুপুরের আগে পূর্বে ভাংচুর করা বাসটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু অতিক্রম করে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তারা রূপাতলী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সামনে এসে তারেক নামের এক শ্রমিককে মারধর করে।
খবর পেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই শ্রমিককে উদ্ধার করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওই স্থান থেকে ফিরিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তবে শিক্ষার্থীরা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল ঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে।
অপরদিকে, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে আন্দোলন নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে স্থানীয় পত্রিকার ইমরান নামের এক ফটোগ্রাফারকে বেধরকভাবে পিটিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ এসে ওই ফটোগ্রাফারকে উদ্ধার করেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘শিক্ষার্থীরা রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের দিক অগ্রোসর হয়েছিল। এসময় এক শ্রমিককে তারা মারধর করে। তবে তাদের রূপাতলী যাওয়ার আগেই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ওই শ্রমিককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি তুলেছে। সেই দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে তাদের আশ্বস্থ করা হয়েছে। এর পরেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সড়ে দাঁড়ায়নি। এ কারণে পরবর্তী বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে জল কামান নিয়ে আসা হয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সাদেকুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যা সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, ‘গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত ও এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ওইদিন সড়ক অবরোধ এবং বিআরটিসি বাস কাউন্টারে ভাংচুর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহামুদুল হাসান তমাল নামের এক ছাত্রকে গভীর রাতে তার মেসে ঢুকে শ্রমিকরা হামলা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসময় তাকে বাচাতে গেলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও পিটিয়ে আহত করে। এই ঘটনায় আহত ১১ জন শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার জের ধরে বুধবার সকাল ৬টা থেকে সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
সান নিউজ/কেআর/কেটি