জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের ছয়রশিয়া থেকে হড়মা পর্যন্ত পদ্মায় ৩ বছর আগে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে গত প্রায় ৩ মাস থেকে শুকনো মৌসুমেও পদ্মায় তলিয়ে যাচ্ছে রক্ষা বাঁধ। এতে হাজারো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন পার করছে প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মাপাড়ে বসবাস করা বাসিন্দারা।
নদী ভাঙনের কারণে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ পদ্মা নদীর এমন আগ্রাসী ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাঠ, মসজিদ, গোরস্থানসহ হাজার হাজার বসতবাড়ি ও হাজারো একর ফসলি জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা তীরবর্তী হড়মা ঘাট এলাকায় থাকা নদী রক্ষা বাঁধের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই প্রায় ১৫-২০টি জায়গা বল্কসহ নদীতে তলিয়ে গেছে। মাত্র ৩ বছরেই বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
গত কয়েক বছরে ১০-১২ বার বাড়ি ভাঙতে হয়েছে ষাটোর্ধ আনোয়ার হোসনকে। অনেক আশা নিয়ে বাঁধের পাশে বাড়ি করেছেন গত বছর। তবে রক্ষা বাঁধ তলিয়ে যেতে শুরু করায় মাথায় হাত আনোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, বল্ক বিছানো ৩ বছর হলো, তাতেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে রাত-বিরাতে বল্ক খসে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে থাকবো আমরা? রক্ষা বাঁধ থাকলেও যে অবস্থা, না থাকলেও একই অবস্থা আমাদের।
হড়মা দানেশ আলীর টোলা গ্রামের আলহাজ আমজাদ আলীর ছেলে টিপু সুলতান জানান, মরা নদীর মুখ থেকে হড়মা ঘাট পর্যন্ত অন্তত ২০ জায়গায় এমন ভাঙন হয়েছে। বাঁধ ভেঙে এই এলাকার সবকিছুই অনেক ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। এখানকার মানুষ এখন নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
সত্তর বছর বয়সী প্রবীণ আজহার আলী জানান, বারবার বাড়ি ভাঙছে, বারবার নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছি। জমিজমা হারিয়ে অন্যের আম বাগানে ১০ হাজার করে ভাড়া দিয়ে বসবাস করছি।
দিনমজুর সাত্তার আলী বলেন, নদীর ভাঙন সবকিছু হারিয়েছি। এই মুহুর্তে কোন জায়গা-জমি নাই। পরের জায়গায় বসবাস করছি। এতো কম সময়ে কিভাবে ভাঙলো? অব্যশই কাজে গাফেলতি আছে, তাই বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। "ভাঙন শুরু হলেই চোখে পানি চলে আসে" এমনটা জানিয়ে মেসের আলীর স্ত্রী নাজমা বেগন বলেন, নদীর পানি ভরপুর ছিলো তখনো ভাঙন ছিলো না। অথচ এখন ভাঙন হচ্ছে।
দেবীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, নদীর পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের মতোই অসময়ে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে মন্ত্রী ও সচিব বরাবর কয়েক দফা ডিও লেটার দিয়েছি। চরবাগডাঙ্গা ও দেবীনগর এলাকার নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত সময়ে শুরু হবে বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, হড়মা ঘাটের নদী রক্ষা বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার মূল কারন হলো, সেখানকার ভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। পদ্মা-মহানন্দার মোহনা ও অতিরিক্ত গভীর হওয়ায় এমনটি হতে পারে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, কয়েক দফার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/কেটি