নিজস্ব প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ৮.৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলাধীন আখাউড়া পৌরসভা। ১৯৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর গঠিত এ পৌরসভায় চতুর্থ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে।
রোববার ( ১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীন ভাবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে সকালে রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তবে কোন বুথে কে ভোট দিবেন এ সংক্রান্ত নির্দেশনা না থাকায় ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বেলা সাড়ে ৮ টার দিকে প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত সমস্যার সমাধান করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া হিসেবে থেকে দেখা যায়, ভোটের দিন প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকছেন অন্তত ৮০ জন করে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৬০০শ এর বেশি আইনশৃংখলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে নির্বাচনী এলাকায় ঢোকার পথে ৪টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যানবাহন চলাচলে বেশকিছু নির্দেশনা ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৯ টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১১টি। তারমধ্যে ৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, মোট ৯টি ওয়ার্ডের সাধারন কাউন্সিল পদে ৪১ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৩টি আসনে ১০ জন লড়াই করছেন। আখাউড়া পৌরসভায় পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ২৩০ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৭৫ জন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে বিএনপির কোন্দল চরম আকারে থাকায় দলের প্রার্থী প্রচারণায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ায় একপেশে নির্বাচনের ধারণাও করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র হিসেবে থাকা মো. নূরুল হক ভূঁইয়া ও মো. শফিকুল ইসলাম খান খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না।
প্রধান বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মোবারক হোসেন রতন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই আওয়ামী লীগ বেশ চাঙ্গা। মো. নূরুল হক ভূইয়া ও মো. শফিকুল ইসলাম খান নামে আরও দুই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও সংগঠনটি মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে ভাবছে বিএনপি প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন আব্দুকে।
তবে দলীয় কোন্দলের কারণে বিশেষ করে সম্প্রতি ঘোষিত পৌর বিএনপির ৩১ সদস্যের কমিটি থেকে ১১ জন পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। তবে প্রচারণার শেষের দিকে ওয়ার্ডভিত্তিক কিছু নেতা-কর্মী দলটির প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সংশ্লিষ্টদের সবুজ সংকেত পেয়ে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. তাকজিল খলিফা কাজল মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেন।
বিএনপির একটি পক্ষ ভেতরে ভেতরে চাইছেন যেন দলের প্রার্থী উৎরাতে না পারেন। বিষয়টিকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ আসনের (কসবা-আখাউড়া) সংসদ সদস্য হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে নিয়ে দলের প্রার্থী তাকজিল খলিফার পক্ষে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা অনেকেই মাঠে নামেন।
জেলা পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১১টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। কর্মকর্তাসহ ৪০০ পুলিশ সদস্য, ৬ প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন র্যাব, ১৩২ জন আনসার সদস্য, ২০ জন এপিবিএন কেন্দ্রগুলো দায়িত্ব পালন করবেন। থাকবে পুলিশের ৪টি মোবাইল টিম, ৩টি স্ট্রাইকিং টিম, ২টি স্ট্যান্ডবাই টিম।
এদিকে ভোটকে সামনে রেখে শনিবার পুলিশ সদস্যদেরকে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকসহ সকলের সঙ্গে পেশাদার আচরণ করার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. রইছ উদ্দিন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসার মো. জিল্লুর রহমান জানান, কেন্দ্রগুলোতে ভোটের মেশিন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আইনশৃংখলা রক্ষায়ও সব ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সান নিউজ/ আকন্ঞ্জি/এসএ