এম. আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : দখল বাণিজ্য, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির অসচেতনতা ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তূপে। যতদূর চোখ যায় প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি পর্যটকদের চোখে পড়ছে সৈকতে উচ্ছিষ্ট আবর্জনার স্তূপগুলো। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতটিও ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। হুমকির মুখে পড়েছে সাগরের জীববৈচিত্র্য। অথচ সৈকতের এমন দুরবস্থা যেন দেখার কেউ নেই।
ধব-ধবে সাদা বালির দ্বীপে দৃশ্যমান এসব আবর্জনার স্তূপ দেখে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকেই মন্তব্য করছেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকত।
তাদের অভিযোগ, সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখতে কমিটি গঠন করা হলেও তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ কাগজে-কলমে। বাস্তবে এ কমিটির অকার্যকর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট ছোট খণ্ড আকারে পুরো সৈকতজুড়ে রয়েছে এসব আবর্জনার স্তূপ। বিশেষ করে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী, ঝাউবন, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, ইনানিসহ সৈকতের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পড়ে আছে পরিত্যক্ত ডাবের ছোবড়া, ডিমের খোসা, পলিথিন, চিপসের খালি প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল ও সামুদ্রিক বর্জ্য। অনেক স্থানে আবার আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে এসব আবর্জনা। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সুগন্ধা পয়েন্টের। এ পয়েন্ট দিয়ে পর্যটকদের সৈকতে নামতে হলে পাড়ি দিতে হয় ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধের কারণে নাক ঢেকে হাঁটতেও কষ্ট হয় পর্যটকদের।
বেড়াতে আসা ইসরাতুল বিন জান্নাত, সাইদুল ইসলাম, আরফাতুল কাউসার, সাঈদ বিন জামান জানান, ‘সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা যেখানে-সেখানে ডাব ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করায় এসব ডাবের খোসা ও আবর্জনাগুলো পড়ে রয়েছে যেখানে-সেখানে। এসব ময়লা-আবর্জনা সৈকতের সৌন্দর্য্যহানীর পাশাপাশি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও মশা-মাছি বৃদ্ধি পাচ্ছে’।
তারা আরো বলছেন, সমুদ্রপারে পড়ে যেভাবে বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ জমা হয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের আন্তরিক পদক্ষেপ জরুরি। অন্যথায় পর্যটকরা বিব্রত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, কয়েক বছর ধরে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির উন্নয়নমূলক কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে না। পুরো সৈকতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, অবৈধ ঝুঁপড়ি দোকান, বিচ বাইকসহ নানা অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। আমরা বারবার বলে আসছি এসবের ব্যাপারে কিন্তু প্রশাসন কান দিচ্ছে না।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা জানান, বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় সমুদ্র ও সৈকত দিনদিন দূষিত হয়ে পড়ছে। এসটিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউস মালিকদের একাধিকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। তারা সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে সমুদ্র সৈকত ও সাগর আরো নোংরা হবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ জানান, সৈকতের উন্নয়ন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায়িত্ব বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির। কিন্তু এখন পর্যন্ত সৈকত পরিষ্কার রাখাসহ কোনো ধরনের কাজ করছে কি না তারাই ভালো বলতে পারবেন।
কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, সৈকতের ময়লা-আবর্জনা দূর করতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সবাইকে নিয়ে দ্রুত বৈঠক করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপরিকল্পিত স্থাপনা ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোনো প্রভাবশালীকেই ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নেয়া হবে।
সান নিউজ/কেটি