নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী বরেন্দ্র অঞ্চলে আগে টমেটো চাষ করেও হতাশায় ভোগতেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। তবে এ বছর পরিস্থিতি বদলেছে। কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রাণ টমেটো কেনায় টমেটো বিক্রির নিশ্চয়তা পেয়েছেন চাষীরা। কমেছে আর্থিক লোকসানের ঝুঁকি।
স্থানীয় পর্যায়ে প্রাণের টমেটো প্রক্রিয়াজাতকারী একটি কারখানা স্থাপন হওয়ায় বরেন্দ্র এলাকার চাষীদের মুখে হতাশার বিপরীতে ভরসার হাসি ফুটে উঠেছে। খোলা বাজারে টমেটো বিক্রির পাশাপাশি এখন প্রাণের কাছে ভালো দামে টমেটো বিক্রি করতে পারছেন তারা।
স্থানীয় টমেটো চাষীরা জানান, আগে টমেটো বিক্রি নিয়ে রীতিমতো সংকটে পড়তে হতো। প্রাণ এখানে কারখানা স্থাপন করায় চাষীদের দুশ্চিন্তা কেটেছে। ভাগ্য বদলেছে চাষীদের। আর্থিকভাবে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। টমেটো চাষে আগে যে হতাশা ছিল এখন তা কেটেছে।
উন্নত প্রশিক্ষণ, বীজ, সার সরবরাহ করায় চাষীরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ করছেন। এতে টমেটো চাষে যেমন ফলন বেশি হচ্ছে। তেমনি উৎপাদিত ভালো মানের টমেটো প্রাণকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, টমেটো চাষে প্রাণ কোম্পানি আসায় ভালো একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগে বিঘাপ্রতি টমেটো চাষে ফলন হতো ৩০-৪০ মণ। এখন উন্নত বীজ ও সার ব্যবহার করায় বিঘা প্রতি ৭০-৮০ মণ টমেটো পাওয়া যাচ্ছে। বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি হচ্ছে এক-দেড় লাখ টাকার টমেটো।
বরেন্দ্র অঞ্চলে টমেটো চাষ ভালো হওয়ায় সেখানেই কারখানা স্থাপন করেছে প্রাণ। প্রাণ এগ্রো বিজনেজ ফার্ম নামের এ কারখানায় টমেটোর পাশাপাশি আম, পেয়ারাসহ নানা ধরনের ফল প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কৃষকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদের পাশাপাশি প্রাণের কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে তিন শতাধিক নারী-পুরুষের।
প্রাণ এগ্রো বিজনেসের উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ১০ হাজার টমেটো চাষীর সঙ্গে আমরা কাজ করছি। মৌসুমের আগেই তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়। এরপর টমেটো তোলার মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সরাসরি টমেটো কিনে নেয়া হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যমতে, গোদাগাড়ীতে চলতি মৌসুমে টমেটো চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে।
জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপ ২০০২ সাল থেকে টমেটো থেকে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করছে। যথাযথ মান নিয়ন্ত্র্রণ করে টমেটো বাজারজাত করায় ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বাজার চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১০ সাল থেকে টমেটোর চুক্তি ভিত্তিক চাষ শুরু করে কোম্পানিটি।
প্রাণ গ্রুপ বলছে, এ বছর প্রাণ প্রায় ১০ হাজার চুক্তি ভিত্তিক কৃষককে ৮৬৭ বিঘা জমিতে টমেটো চাষে সহায়তা করেছে। চলতি বছর টমেটো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার টন। টমেটো থেকে সস ও কেচাপ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে টমেটো থেকে সস ও কেচাপের বাজার ২৫০ কোটি টাকার মতো।
বাংলাদেশে শীতকাল টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণ করা হয়। জাত ও লাগানোর সময়ের ওপর নির্ভর করে দু-চার মাসের মধ্যেই ফলন তোলা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চল নামে প্রসিদ্ধ গোদাগাড়ীর অন্তত ৮ হাজার কৃষক টমেটো চাষে জড়িত। এসব কৃষক প্রাণের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিক চাষাবাদ শুরু করেছেন।
সান নিউজ/এসএ