শিপলু জামান, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বারোবাজারে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ বাস সিন্ডিকেটের নিজেদের তৈরি তথাকথিত ‘সময় আইন’ অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও ফিটনেছবিহীন গাড়ি। সময় রক্ষার নামেই ওভারস্পিডে গাড়ি চালান চালকরা। আর তাতেই দুর্ঘটনা। যাতে বলি হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। চলতি বছরে এ আইনের ফাঁদে জীবন হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। কেবল ‘সময় আইন’ নয; অবৈধ পুরাতন ফিটনেছ বিহীন যানবাহন, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য ও সড়ক দখলের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। অবশ্য এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষে নেই তেমন কোন তৎপরতা।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের অদূরে এক ভয়াবহ সড়কে দুর্ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারান। এসময় আহত হয় কমপক্ষে আরো ২৫ জন। নিহতদের মধ্যে নয় জন পুরুষ, দুইজন নারী ও একজন শিশু ছিল। এছাড়া এদের মধ্যে ছয়জনই ছিল কলেজ শিক্ষার্থী। যারা যশোর থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে বাড়ীর উদ্দেশে বাসে উঠেছিল। পথিমধ্যে বারোবাজার তেলপাম্পের কাছে পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারায় এতে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক শামীমুল ইসলাম জানান, বাসটির গতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জানাগেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে সারাদেশের যোগাযোগের প্রধান সড়ক খুলনা-যশোর-ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া–যশোর-চুয়াডাঙ্গা সড়কটি। এ সড়কে প্রধান যাত্রীবাহী বাস হলো রুপসা ও গডাই, শাপলা পরিবহন। বেশির ভাগ বাস ১০ থেকে ১৫ বছরের নতুন রং রেপায়ারিং করা। প্রতিদিন কুষ্টিয়া থেকে ৩৬টি গড়াই পরিবহন খুলনা এবং খুলনা থেকে ৪৩টি রুপসা পরিবহনের বাস কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রুপসা পরিবহন ৯ মিনিট এবং গডাই পরিবহন ১০ মিনিট ও শাপলা পরিবহনের ১০ মিনিটি পরপর একটি করে গাড়ি ছাড়ে। এসব গাড়ির একটি স্টপেজ থেকে অপর একটি স্টপেজে পৌঁছানোর জন্য বাস সিন্ডিকেট থেকে তৈরি করে দেয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়। প্রতি স্টপেজে যাত্রী উঠানো নামানোর কাজ শেষ হলেই বাস ছেড়ে যাওয়াার কথা কিন্তু যাত্রী নামানোর পরও চালকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে নির্ধারিত সময় পরের স্টপেজে পৌঁছানো অনেক সময় দুরহ হয়ে পড়ে। এজন্য চালকরা সময় মত পৌঁছাতে বেপোরোযা গতিতে বাস চালিয়ে থাকেন। ফলে ব্যস্ত সডকে প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
এদিকে, রুপসা পরিবহনের চালক রবিউল ইসলাম জানান, যশোর থেকে কালীগঞ্জ পৌঁছাতে ৩৫ মিনিট সময় বেধে দেওয়া। আর কালীগঞ্জ থেকে ঝিনাইদহে পৌঁছাতে ২৫ মিনিট। নির্ধারিত সময়ে না পৌঁছাতে পারলে রয়েছে অর্থদন্ডসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় প্রায়ই দেখা যায় ইজিবাইক, মোটরচালিত রিক্সা-ভ্যান ও সাধারণ মানুষ অসচেতনভাবে রাস্তার উপর চলে আসে। আর তাদের জীবন রক্ষা করতে গিয়েই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে
ঝিনাইদহ জেলা বাস মালিক সমিতির বর্তমানে কোন কমিটি নেই। তবে এ সমিতির সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু জানান, সড়কে যাত্রীবাহী বাসগুলো ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। অনেক সময় অবৈধ থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, আলমসাধু ও নসিমনগুলো অসচেতনভাবে গাড়ির সামনে চলে আসে। যখন বাস চালকদের কিছুই করার থাকে না। ফলে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. সালাহউদ্দীন জানান, সড়কে চালকদের বেপরোয়া চলাচলই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ক্যাম্পেইন করা জরুরি।
সান নিউজ/কেটি