আকতারুজ্জামান, মেহেরপুর : মেহেরপুরের গাংনীতে ধর্ষণের শিকার বাক প্রতিবন্ধীর সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জটিলতা। অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ করা হলেও মেলেনি পিতৃ পরিচয়। এখন সন্দেহের তীর সাবেক স্বামীসহ এলাকার কয়েক যুবকের দিকে। তবে খুব শিগগির তাদের ডিএনএ টেষ্ট করানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী অফিসার।
জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের আনারুল ইসলামের বাক প্রতিবন্ধী তাপসী খাতুনের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের যুবক ইব্রাহিমের সাথে। বিয়ের কয়েক মাস পর গত ১৪/১২/১৯ ইং তারিখে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে তাপসীর পেটে ব্যাথা হলে স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা হলে ধরা পড়ে তাপসী গর্ভবতী হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেটি স্থানীয়রা বিশ্বাস না করলেও পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা হয়। সে রিপোর্টে বিষয়টি পজেটিভ আসলে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তাপসীর কথা অনুযায়ী প্রতিবেশী রাহিল উদ্দীনের ছেলে বানারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে গাংনী থানায় মামলা করা হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পিতার পরিচয় সনাক্ত করতে বানারুল ইসলামকে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) পরীক্ষা করা হলেও তার সাথে মিলছে না শিশুর পিতৃ পরিচয়। এ নিয়ে বাক প্রতিবন্ধীর পরিবার পড়েছে বিপাকে ।
তাপসীর মা ফিরোজা খাতুন জানান, তার বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে তাপসীকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবেশী বানারুলের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৮। তাং ০৬.০৮.২০২০ ইং। মামলায় কয়েক মাস জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে বানারুল ইসলাম।
গত ৬ নভেম্বর রাতে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে তাপসী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করলেও বানারুলের সাথে তাপসীর কন্যার ডিএনএ টেস্ট মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তাপসী বাক প্রতিবন্ধী হলেও আদালতসহ সকলকে জানিয়েছে বানারুল তাকে ধর্ষণ করেছে। বানারুল ইসলাম প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে সে মামলা তুলে নেয়াসহ নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে।
বাক প্রতিবন্ধী তাপসীর নানী আনোয়ারা খাতুন জানান, প্রতিবেশী রহিল উদ্দীনের ছেলে বানারুল তাপসীকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কারণে গর্ভবর্তী হয়ে সন্তান প্রসব করেছে তাপসী।
তাপসীর মামাতো ভাই মকলেচুর রহমান জানান, মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বানারুল কতিপয় সমাজপতিদের নিয়ে নানা অপপ্রচার করছে। এদিকে ধর্ষণ মামলার আসামি বানারুল ইসলাম দাবি করেছেন তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তবে তাপসীর পরিবার তাপসীকে বাক প্রতিবন্ধী বল্লেও সাংবাদিকদের সাথে তিনি সুন্দর ও সুস্পষ্ট কথা বলতে পেরেছেন। তাপসীর সাথে কেউ কথা বলতে চাইলে তাপসীর পরিবার তাকে বাকপ্রতিবন্ধী হিসেবে কথা বলতে নিষেধ করেন।
প্রকৃত পক্ষে তিনি বাকপ্রতিবন্ধী কি না তা খতিয়ে দেখার দরকার বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে তালাক নামা ও সন্তানের জন্ম নেয়ার বিষয়ে যে তারিখে দেখানো হচ্ছে তাতে তাপসীর স্বামীকে প্রথম অবস্থায় ডিএনএ করানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন সুধীমহল। তা না হলে এলাকার অনেক মানুষেরই সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সুমন জানান, মামলার আসামি বানারুলের সাথে শিশুর ডিএনও টেস্টে মিল নেই। এ কারণে তাপসীর সাবেক স্বামীর ডিএনও টেস্ট করা হবে। মামলার তদন্ত শেষ করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
সান নিউজ/এজে/এনকে