## জনপ্রতিনিধিদের ৫০ হাজার টাকা দাবি
## তালিকায় নাম থাকলেও পাননি দুস্থরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর : মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকাঘর বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে রংপুরের মিঠাপুকুরে। জনপ্রতিনিধিদের ৫০ হাজার টাকা না দেওয়ায় তালিকায় নাম থাকলেও পাননি ঘরের বরাদ্দ। এছাড়াও, অনেক দুস্থদের টাকা গ্রহণ করলেও এখনও ঘর মেলেনি তাদের ভাগ্যে।
মিঠাপুকুরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে রয়েছে সরকারি পাকাঘর বরাদ্দের নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের নিলুফা বেগম একজন বিধাবা। মা আনোয়ারা বেগমের সাথে একটি খুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরুপ একটি পাকাঘর বরাদ্দ হয়েছিল তার নামে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বরাদ্দের ঘর তার ভাগ্যে জোটেনি।
নিলুফা বেগমের অভিযোগ, ঘর দেওয়ার জন্য বালুয়া মাসিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক তার কাছে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ চেয়েছিলেন। কিন্তু, হতদরিদ্র নিলুফা বেগম টাকা দিতে পারেনি। এর ফলে, তার (নিলুফা) নাম কেটে আরেকজনকে ঘর দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
একই অভিযোগ ওই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে আলামিন মিয়ার। তিনি বলেন, ‘ঘরের তালিকায় আমার নাম ছিল। পাকাঘর দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। আমি অসহায়, এতোগুলো টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই ঘরও পাইনি।’
আরেক ভুক্তভোগী মুঘলকোট গ্রামের জাবেদুল হকের স্ত্রী বিউটি বেগম। তার কাছেও ঘর বরাদ্দের জন্য টাকা চেয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক। টাকা দিতে না পারায় তারও ভাগ্যে জোটেনি বরাদ্দের ঘর। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুস্থরা গত বছরের জুন মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, ৮ মাসেও কোন সুরাহা পাননি তারা।
সরেজমিনে হামিদপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট একটি টিনের খুপরি ঘর রয়েছে নিলুফা বেগমের মা আনোয়ারা বেগমের। ওই ঘরেই কষ্ট করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারা।
নিলুফা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। নদীতে ভেঙ্গে গেছে বাড়িঘর। মায়ের সাথে এই বাড়িতে থাকছি। আমার নামে একটি পাকাঘর বরাদ্দ হয়েছিল। চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারায় আমার নাম কেটে ঘরটি আরেকজনকে দিয়েছেন তিনি।’
শুধু বালুয়া মাসিমপুরে নয় মিঠাপুকুরের অনেক ইউনিয়নেই সরকারি পাকাঘর দেওয়ার জন্য দুস্থদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে অনেক জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে অনেক দুস্থ ঘর পেলেও বাকিরা দুঃচিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘কোন কারণে তাদের নামগুলো বাদ পড়েছিল। নতুন করে বরাদ্দ এলে তাদেরকে পাকাঘর দেওয়া হবে।’
একই উপজেলার শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের মরিচবাড়ি গ্রামের ভিক্ষুক অন্ধ এনদা মিয়া। তাকে পাকাঘর দেওয়ার জন্য একটি গরু ও নগদ টাকা দিয়েছিলেন ইউপি সদস্য জলিল মিয়া। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে জোটেনি পাকাঘর।
ভিক্ষুক এনদা মিয়া (৩০) বলেন, ‘মুই তো ভিক্ষে করি খাঁও। মানষের জমিত থাকো। একটা গরু কিনছিনু, সরকারি ঘর দিব্যারর কথা কয়া গরুট্যা নিয়ে গেইচে। মোর মায়ের কাছ থাকিও ২৫ হাজার টাকা নিছে মেম্বার।
একই গ্রামের বৃদ্ধা মর্জিনা খাতুন (৬০) বলেন, ‘মুই তো মানুষের বাড়িত কাজ করি খাও। থাকো মানুষের জমিত। সরকার মোক ঘর দেবে কয়া মেম্বার ৩০ হাজার টাকা নেচে। কিন্তু মেম্বার মোর টেকা নিয়ে মোক আর ঘর দেয় নাই। টাকাও দেয় নাই। মোর টেকাগুলো মোক ফিরি দিবের কন বাবা।’
তবে শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জলিল মিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন ভূঁইয়া বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সকল দুস্থকে ঘর দেওয়া হবে। তবে, অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সান নিউজ/এইচআর/কেটি