আবুল কালাম, ময়মনসিংহ: মা শব্দটি অতি মধুর ও অতুলনীয়। খোদার পরেই মা, মায়ের ভালোবাসার কাছে সবই তুচ্ছ। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা তুলনাহীন। ঠিক তেমনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নে সন্তানের প্রতি এক মায়ের ভালোবাসার এমনই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নে সৈকত আলী (২৫) নামে মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে হারানোর ভয়ে লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছেন মা রোকেয়া বেগম। প্রায় ২০ বৎসর ধরে ঘরের বারিন্দার খুটির সাথে লোহার শিকলে বাঁধা জীবন খাটছে প্রতিবন্ধী সৈকত আলীর। সে জন্মের সময় মাথায় চাপ তথা আঘাত পেয়েছিল।
ধীরে ধীরে তার মাঝে মানসিক প্রতিবন্ধীর লক্ষণ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তাকে হারানোর ভয়ে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয় মা রোকেয়া বেগম। কোন কিছুই চাইলে তা হাত বাড়িয়ে ধরতে পারে না, টান পড়ে শিকলে। তবে মুখে সবর্দা সোনালী হাসি আর হৈ হৈ ওই ওই খাইছ, বস বস ডাক দেয় সবসময়। তবে কাউকে আঘাত না করলেও অন্য কোথাও যেন কোথায় পালিয়ে না যেতে শিকল পড়িয়েছে তার পায়ে।
নিজ বাড়িটুকু ও পরিবারের সদস্যদের স্মৃতি ধরে রাখতে পারে না প্রতিবন্ধী সৈকত আলী। শুধু হৈ হুল্লুড় চিৎকার করে। খাবারের সময় এলেই মা তুলে দেয় মুখে ভাত। প্রকৃতির ডাকে ছেলে সাঁড়া দিতে না পারায়, মা তার কোলের সন্তানের মতো ছেলের সমস্ত প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করে দেয়। মা রোকেয়া বেগম একই গ্রামের রিপন মিয়ার স্ত্রী।
বাবা রিপন মিয়া স্থানীয় এক মাদ্রাসার নাইট গার্ডের চাকরি করেন। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। তবে তিন ছেলের মধ্যে সৈকত আলী একজন। ছেলে সুস্থ হওয়ার জন্য এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও কবিরাজি সহ ঝাড়ঁ-ফুকের মতো বিভিন্ন চিকিৎসা করার বাকি রাখেননি উক্ত পরিবার। এমনকি বাংলাদেশের বিখ্যাত পাবনা মানসিক হাসপাতালেও চিকিৎসা করিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, সুস্থ হয়নি তার পুত্র।
রোকেয়া বেগম আরও জানান, ছোটকাল থেকেই ছেলে হারিয়ে যাবার ভয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। শত ক্ষতি করলে ওতো আমার সন্তান। শিকলে বেঁধে রাখতে আমারও কষ্ট হয়, তবু হারানোর ভয়টা এর চেয়েও বেশি কষ্টকর। তাই নিজ সন্তানকে শিকলে বেঁধে রাখি। তবে আমি মনে করি উক্ত ছেলেকে বিদেশে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে বিদেশে চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো।
সান নিউজ/কেটি