বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও : বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষির্কী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করলেও ঠাকুরগাঁওয়ে জয়নাল আবেদীন (৮০) নামে এক মানুষ গড়ার কারিগর আজ গৃহহীন অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। নিজের জমিজমা ও ঘর না থাকায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাস করছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বুড়িরবাঁধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পরিত্যক্ত ঘরে। নির্জন এলাকায় বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার ঘরে একাকী জীবন যাপন করা সাবেক এই প্রধান শিক্ষক বয়সের ভারে আজ ন্যুয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগের। খাবার ও ওষুধ কেনার সামর্থ নেই তার। ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারা এই মানুষটির জীবন চলছে এখন ভিক্ষা করে।
এক সময়ের টকবগে যুবক জয়নাল আবেদীন আজ বয়োবৃদ্ধে পরিনত হয়েছে। ১৯৬৩ সালে তিনি দিনাজপুর ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ হতে এইচএসসি এবং স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। লেখাপড়ার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতা করতেন। থাকতেন সদর উপজেলার দক্ষিন ঠাকুরগাঁও ও বকসের হাট এলাকার খোমত মহালদারের বাসায়।
তিনি বকসের হাট, বড়গাঁও মাদরাসা, কাচারী বাজার, ফাঁড়াবাড়ি, কদম রসুল, আখানগর, দক্ষিণ বোচাপুকুর ইত্যাদি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। পরে পাকিস্তান আমলে ফাঁড়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ওই সময় বিদ্যালয়ের টাকা পয়সা না থাকার পরও বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছেন। স্কুলের কাজে টাকা ধার করে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে যেতেন তিনি।
সর্বশেষ সদর উপজেলার খড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সেক্রেটারী হিসেবে রাজশাহী ডিডি বরাবরে দরখাস্ত করেন “ওপেন টু ক্লাস নাইন”।স্কুলে পাঠদানের অনুমতি গ্রহণসহ বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ করেন। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অজ্ঞাত কারণে অমানবিকভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করে। এ ঘটনার তিনি আদালতের আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, আমাকে অবৈধভাবে সাসপেন্ড করা হলে আমি ডিসি কোর্টে মামলা করি। ওই মামলায় আমার সঙ্গে পারেনি ওরা। পরে মহকুমা শিক্ষা অফিসার এসে ডিসমিস করে এবং প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য করে আরও কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়। আমাকেও সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে আমি যোগদান করিনি।
স্থানীয় রমজান আলী, চুমানু চন্দ্র সরকারসহ অনেকে জানান, জয়নাল মাষ্টার ইংরেজিতে ছিলেন বেশ তুখোঁড়। এখনও তিনি কথায় কথায় ইংরেজিতে কথা বলেন। তিনি টেলিভিশনের সামনে বসলে এখনো ইংরেজি খবর শুনেন। চাকুরিচ্যুত সাবেক এই প্রধান শিক্ষক আজ অর্থাভাবে অনাহারে অন্ধকার ভূতুরে ঘরে বসবাস করছেন।
মামলা চালাতে চালাতে সহায় সম্বলহীন এই মানুষ গড়ার কারিগর আজ নি:স্ব। মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একাধিক রোগে তার জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। পরনে ময়লা কাপড়, থাকার ঘর, চিকিৎসা করার মতো টাকা পয়সা কোনোটাই তার নেই। চিরকুমার এই অসহায় মানুষটিকে শেষ বয়সে দেখারও কেউ নেই। সারাদিন পড়ে থাকেন সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন বকসের হাটে। সেখানে ময়লা আবর্জনায় শুয়ে দিন কাটান তিনি।
এ ব্যাপরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পরিত্যক্ত ঘরে জয়নাল আবেদীন নামে একজন শিক্ষক মানবেতর জীবন যাপন করছেন বিষযটি গণমাধ্যমের সহায়তায় জানতে পেরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নিই। ওই ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা প্রদানসহ প্রধানমন্ত্রীর আবাস প্রকল্পের আওতায় তাকে একটি ঘর প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। সর্বোপরি তার চাকুরি হারানোর বিষয়েও সহযোগিতা চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
সান নিউজ/এসএম