ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২ লাখ ২৮ হাজার টাকায় কেনা আসবাবপত্র নিজের বাসায় নিয়ে গেলেন সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। বিষয়টি স্বীকার করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ডকুমেন্ট পেলে আমি ফার্নিচারের টাকা পরিশোধ করে দেবো।
এ বিষয়ে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের প্রকিউরমেন্ট কর্মকর্তা প্রকৌশলী সালমা বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রশাসক স্যারের দপ্তরের জন্য ফার্নিচার কেনার একটি আদেশ পাস হয়। পরে ওই ফার্নিচার স্টোরের হিসাবে লিপিবদ্ধ না করে ওনার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে প্রশাসক স্যার দপ্তরের নামে কেনা ফার্নিচারের ওই টাকা পরিশোধ করবেন। ডকুমেন্ট পাঠালে দিয়ে দেবেন বলেছেন।
চসিকের হিসাব শাখার অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, চসিকের জন্য কেনা ফার্নিচারের টাকা উনি দিয়ে দিবেন বলে আমিও জানি। তবে এখনও হিসাব শাখার কাগজ পাননি বলে ওই টাকাটা পরিশোধ করতে পারেননি।
অন্যদিকে এই ফার্নিচার কেনাকাটায়ও মিলেছে অনিয়মের তথ্য। তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে (শূন্য দুই পিএওএস/২০২০-২০২) মোতাবেক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক দপ্তরের জন্য ফাইল কেবিনেট ও ইজি চেয়ার সরবরাহের কার্যাদেশ অনুমোদন দেন সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী (ডি-২) কন্ট্রোলার অব স্টোর। এ কার্যাদেশ অফিস আদেশ হিসেবে পালনের জন্য সেখানে চারদিনের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়।
তবে ফাইল কেবিনেট ও ইজি চেয়ার কেনার পরিবর্তে সেখানে কেনা হয়েছে আর্মি চেয়ার। প্রতিটি চেয়ারের মূল্য পড়েছে ৭ হাজার ৬০০ টাকা করে। এ হিসেবে ৫টি আর্মি চেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৩৮ হাজার টাকা। ৪ হাজার ৬২৫ টাকা করে মোট ৮টি টেবিল ও সাইড টেবিল কেনা হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে। ১৭ হাজার ৬০০ টাকা দামের মাল্টিপারপাস শেলফ কেনার পাশাপাশি পরিবহন ভাড়াও লেগেছে ১৪০০ টাকা। সবমিলিয়ে মোট খরচ পড়েছে মোট ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অথচ ফাইল কেবিনেট ও ইজি চেয়ার কেনার জন্য ফকিরহাটের আল মদিনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিও করে সিটি কর্পোরেশন। যেখানে ৪৬ হাজার টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু ফার্নিচার বদলে খরচ করা হয় ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোন কল করা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমি ১ ফেব্রুয়ারি চলে আসার সময় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাকে বলে এসেছি ফার্নিচারের টাকা আমার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডকুমেন্ট পেলে বা সেখানকার কেউ আসলে আমি এই টাকাটা দিয়ে দেবো।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৯ মার্চ চসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এই নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। এরমধ্যে ওই বছরের ৫ আগস্ট চসিক নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়। ফলে তৎকালীন সময়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সরিয়ে ৪ আগস্ট চসিক প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগর সিনিয়র সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দাযিত্ব নিয়ে চসিকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন খোরশেদ আলম সুজন। গত ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের প্রজ্ঞাপনে প্রশাসক পদ থেকে বিদায় নেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে।
সান নিউজ/কেটি