নিজস্ব প্রতিনিধি, যশোর : আসন্ন দেশের জাতীয় দিবস ও বাঙালীর বিভিন্ন উৎসব ঘিরে করোনা পরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার আশায় দিন গুনছেন যশোরের ফুল চাষী ও ব্যবসায়িরা। করোনার কারণে গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ফুল ব্যবসায় মন্দা, পরবর্তীতে সুপার সাইক্লোন আম্পান এর আঘাতে এ ব্যবসাকে আরও তলানিতে নিয়ে যায়।
এ অবস্থায় চলতি বছরের শুরু থেকেই নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধেছেন ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা। আশা করছেন আসন্ন বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার।
বাণ্যিজিকভাবে যশোর জেলায় ফুল উৎপাদন শুরু হয় আশির দশক থেকে। দেশে ফুলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারও এখানে। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা যশোরের গদখালীর পাইকারি ফুল বাজারে আসেন ফুল কিনতে। প্রতি বছর ফুল চাষ ও কেনাবেচায় শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয় এখানে।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকম ফুল। ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার গ্রামগুলোতে রাস্তার দুই পাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখা যায়।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ফুলের আবাদ হয়েছিল ৬৩২ হেক্টর, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৬৩৩ হেক্টর, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৬৩৬ হেক্টর, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬০০ হেক্টর এবং চলতি মৌসুমেও আবাদ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। ফুল উৎপাদন হয় গড়ে ৫৮ কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ পিস। হেক্টরপ্রতি ফুল উৎপাদন হয় ৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ পিস। এছাড়া গোলাপ ফুল উৎপাদন হয় ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৬ পিস।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউবা, ফুলিয়া আর শার্শার নাভারন, উলাশি, গদখালী ও শ্যামলাগাছি গ্রামের প্রায় প্রতিটি মাঠ এখনো ভরা ফুলে। শত শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ রয়েছে এখানে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এবার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুলচাষীদের ভরা মৌসুম। করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফুল সেক্টরের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে ওই ক্ষতি কিছুটা কেটে যাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০০ পিস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, রজনীগন্ধা ৫০০, গ্লাডিওলাস মানভেদে ৩০০ থেকে ৮০০, জারবেরা ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং গাঁদা ফুল প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। আশা করছি দিবসের আগে দাম আরো বাড়বে। কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা আমাদের।
যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম হোসেন পলাশ জানান, উপজেলার গদখালীতে এবার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করা হয়েছে। করোনাকালে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তারা সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন।
সান নিউজ/এসএ