ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলে প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৯০ জন। দ্বিতীয় দিনে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭৮ জনে। আর তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রীতিমতো ভীড় জমেছে সবকটি টিকাদান কেন্দ্রে। সেই সাথে বাড়ছে অনলাইন নিবন্ধনও। যা দেখে বোঝাই যায় টিকায় আগ্রহ বাড়ছে মানুষের।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফলে রাব্বি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।
তাদের মতে, করোনার টিকা নিতে চট্টগ্রামে অনলাইনে প্রথম দিনে নিবন্ধিত ছিলেন মাত্র দেড়শ জন। যাদের সবাই স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ফ্রন্টলাইনার। আর ছিলেন রাজনীতিক, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে থেকে ১০০ জনকে টিকা দেয়ার টার্গেট ছিল ওইদিন। এরপরও চমেক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মিলে ১২০ জনকে টিকা দেওয়া হয়।
তবে আসল প্রভাব পড়ে চসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্ধারিত আরো ১৩ টিকাদান কেন্দ্রে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরে ওইদিন ৬৬৩ জনকে টিকা প্রদান করা হয়। একইসাথে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় টিকা গ্রহণ করেন ৪২৭ জন। সবমিলয়ে টিকা নেন এক হাজার ৯০ জন।
কিন্তু দ্বিতীয় দিন সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলে টিকা নেন ২ হাজার ৬৭৮ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ১২৯ জন পুরুষ এবং ৫৪৯ জন মহিলা। আর তৃতীয় দিনে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার সবকটি টিকাদান কেন্দ্রে আগ্রহীদের ভীড় দেখা গেছে। যা টিকা উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে বড় টিকাদান কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল থেকেই টিকা পেতে ভীড় জমান সম্মুখসারির যোদ্ধারা। এরমধ্যে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টিকা নিতে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও প্রবীণ চিকিৎসক ডা. ইমরান বিন ইউনুস প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও প্রবীণ চিকিৎসক ডা. ইমরান বিন ইউনুস বলেন, দেশের বাইরে টিকা নিয়ে বিরূপ পাশর্^ প্রতিক্রিয়ার খবরে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশের সাথে চট্টগ্রামেও টিকা দেওয়া শুরু হলেও নিবন্ধন ছিল কম।
তবে প্রথম দিনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ রাজণীতিক নেতা চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধারা টিকা নিয়ে বিরূপ পাশ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকার খবরে সেই আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। ফলে টিকায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তাতে বাড়ছে অনলাইন নিবন্ধনও।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, আগের তুলনায় টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের মনে যে শঙ্কা ছিল তা দূর হয়ে গেছে। সরকার বয়স সীমা ৪০ করার পর মানুষের মধ্যে আরও আগ্রহ বেড়েছে। ফলে নিবন্ধনের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সাথে মানুষের ভিড় সামাল দিতে কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
চসিকে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা, সেলিম আকতার চৌধুরী জানান, উদ্বোধনের দিন নগরীসহ চট্টগ্রামে ২০ কেন্দ্রে টিকাদানের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। কিন্তু মানুষের ভীড় বাড়ায় টিকাদান কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে আরও তিনটি। সোমবার থেকে একযোগে ২৩ কেন্দ্রে চলছে টিকাদান কার্যক্রম। টিকাদানের দ্বিতীয় দিনে ২৩ কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৭৮ জনকে টিকা প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার এ সংখ্যা বেড়ে আরো দ্বিগুণ হতে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে প্রথম দিন ১ হাজার ৯০ জনকে টিকা দেওয়ার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও টিকা নেয়ার পর ৪-৫ জনের শরীরে স্বাভাবিক জ্বর এসেছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে তাও সাধারণ জ্বর বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য টিকা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। টিকা নেয়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। গ্রাম অঞ্চলের মানুষও এখন টিকা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন। মিডিয়ার প্রচারের ফলে এমন আগ্রহ বাড়ার কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নিবন্ধন ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে :
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনার ভাইরাসের সুরক্ষার টিকা পেতে ২৯ হাজার ৬৬০ জন অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করলেও এখন তা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ হাজার ৮০৬ জন টিকা নিতে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩২ হাজার ৪৬৬ জন টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৩ হাজার ৬৩৫ জন এবং ১৪ উপজেলায় ৮ হাজার ৮৩১ জন সুরক্ষা অ্যাপের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন বলে তথ্যে আরো জানানো হয়।
সান নিউজ/আইকে/এনকে