এনামুল কবীর, সিলেট : ১০ বছর ধরে অসমাপ্ত। জীর্ণশীর্ণ চেহারার সাথে আশপাশের আবর্জনা জানান দেয়, কতটা হেলাফেলায় যাচ্ছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। চকচকে ভবনের সামনে বড়ই বেমানান ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত সিলেট সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (তিব্বিয়া কলেজ) চত্বরের শহীদ মিনার।
অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ। রঙের আঁচড় লাগেনি এত বছরেও। দেখতে অসহায় ভগ্নদশা। তারপর আছে অযত্নের চিহ্ন। সামনে পেছনে আবর্জনা, যেনো ময়লার ভাগাড়। মাঝে মাঝে এখানেই ঘটে কুকুর সমাবেশ। অথচ এটি বাংলা ও বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের উৎস, মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত!
আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে ঢাকার রাজপথ বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন সালাম বরকত রফিক জব্বার শফিউলসহ নাম না জানা আরো অনেকে তরুণ-যুবা। ঘাতকেরা তাদের শেষ কৃত্যের সুযোগও দেয়নি। আর তাই আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম শহীদমিনার গড়ে উঠেছিল তৎকালীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে। মাত্র একরাতেই (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রথম শহীদমিনারটির নির্মাণকাজ শেষও হয়েছিল। কিন্তু আতংকিত পাক-সরকার সেটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
এরপর সারাদেশে শুরু হয় শহীদ মিনার নির্মাণের চেষ্টা। স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক শহীদ মিনার। তারই ধারবাহিকতায় বর্তমান সরকার বিষয়টির প্রতি বিশেষ নজর দেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি উদ্যোগেও শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে। এখনো হচ্ছে।
উদ্যোগ ছিল সিলেট মহানগরীর উপশহর ‘ডি’ ব্লকে অবস্থিত সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (সরকরি তিব্বিয়া কলেজ) প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার স্থাপনের। সেটির কাজও শুরু হয়েছিল। তারপর বাজেট সঙ্কটের অজুহাতে সেটি পড়ে আছে অর্ধনির্মিত অবস্থায়। এই কলেজের আগের ক্যাম্পাস ছিল নগরীর চালিবন্দরে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সেটি উপশহরের বর্তমান স্থানে স্থানান্তর হয়। নতুন ভবন উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেই ২০১১ সালে।
কিন্তু ভবনের কাজ শেষে উদ্বোধনের প্রায় একযুগ হতে চললেও আজও শহীদ মিনার পড়ে আছে অর্ধনির্মিত অবস্থায়। তাছাড়া এর চারপাশে ময়লা জমে ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকেই অযত্ন আর অবহেলার বিষয়টি সহজেই বুঝা যায়। এমন অযত্ন আর হেলাফেলায় ব্যথিত আর তাই ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী তাদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্থানীয়রা।
সচেতন এলাকাবাসীর মতে, কলেজ কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের কাজ শেষ করার কোন চেষ্টা করছেন কি না, তারাই জানেন। তবে তারা যত্নের ধার ধারেন না।
আর তাই সেখানে যেমন প্রায়ই কুকুর সমাবেশের ঘটনা ঘটে, তেমনি দিনে দিনে এর চারপাশটা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি এক দুপুরে সরজমিনে কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে তার সত্যতাও মিলেছে। তখন কুকুর সমাবেশ দেখা না গেলেও শহীদ মিনারটির আশপাশে প্রচুর আবর্জনা দেখা যায়। মিনারটি অনেক বছর ধরে এমনই পরিত্যক্ত রূপে পড়ে আছে। রঙ করা হয়নি। এমনকি সুর্যটাতেও লাগেনি তুলির আঁচড়।
কলেজের প্রিন্সিপাল মুহিবুর রহমান খান অযত্ন বা অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। কুকুর সমাবেশ কখনো তার নজরে পড়েনি বলে জানালেও ময়লা পরিস্কারে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দোষটা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘাড়ে চাপিয়েছেন।
বললেন, তারাই ‘বাজেট নেই’ অজুহাতে কাজটা শেষ করছে না। আমরা অনেকবার তাদের কাছে গিয়েছি। এমনকি লিখিত আবেদনও দিয়েছি। তারা বাজেট হলে করবেন বলে কাজটি পড়ে আছে। কলেজের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই যতটুকু সম্ভব আমরা কাজ করানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে সম্পূর্ণ কাজ করার সক্ষমতা আমাদের নেই।
সান নিউজ/এক/কেটি