নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে প্রথম করোনার টিকা নিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চসিক) কেন্দ্রে টিকা নেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭ জোন ও ১৪ উপজেলায় শুরু হলো করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম।
এতে প্রথম অংশীদার হলেন চমেক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষা উপমন্ত্রীর টিকা গ্রহণের পরপর দায়িত্বশীল বেশ কয়েক কর্মকর্তাও টিকা নেওয়া শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
এই তালিকায় তিনি নিজেও রয়েছেন বলে জানান ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। এছাড়া-চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি প্রমুখ রয়েছেন।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর জানান, টিকাদানে চমেক হাসপাতালের চার তলায় (আইসিইউর পাশে) চারটি বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি বুথে পুরুষ এবং দুটি বুথে মহিলাদের টিকা দেয়া হবে। টিকাদানে এরই মধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
টিকাদানে নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ১০টি টিম। টিকাদানের পর টিকাগ্রহণকারীকে আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এজন্য টিকা গ্রহণ পরবর্তী অপেক্ষাগারও প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো ধরনের জটিলতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা দেখার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের জন্য থাকছে সুপেয় পানির ব্যবস্থাও।
হুমায়ুন কবীর আরো জানান, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত অনলাইনে টিকা নেওয়ার দেড়শ আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন একশজনের মতো নিবন্ধনকৃত সম্মুখ সারির যোদ্ধাকে টিকা দেয়ার টার্গেট রয়েছে আমাদের। তবে এর বেশি হলেও আমরা চালিয়ে নিয়ে যাব। অন্য সময়ে প্রতিদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চালু থাকবে।
চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ৬০ লাখ মানুষের বাস। আমাদের বরাদ্দ ১ লাখ ৫৪ হাজার। আগামীকাল চমেক হাসাপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সী যারা রেজিষ্ট্রেশন করেছেন তাদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও ছোট পরিসরে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম নগরে প্রাথমিকভাবে ১৫টি টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। এই ১৫ কেন্দ্রে করোনার টিকা দিতে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। প্রতিটি টিমে থাকবেন ৬ জন করে সদস্য। এর মধ্যে দুজন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক।
টিকাদান কেন্দ্রগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল, চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা হাসপাতাল, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৫ ডোজ । বাকি ৩ লাখ ১ হাজার ৯৫ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার জন্য।
এরই মধ্যে বরাদ্দ হওয়া টিকা উপজেলাগুলোয় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় করোনার টিকা দেয়া হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুটি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে।টিকাদানের সার্বিক প্রস্তুতিও শেষ করেছে সিভিল সার্জন অফিস।
সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডোজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পটিয়ায়। এ উপজেলায় দেয়া হয়েছে সাড়ে ৩১ হাজারের বেশি ভ্যাকসিন ডোজ। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলায় ১৫ হাজার ৫২৪ ডোজ, বাঁশখালীতে ২৫ হাজার ৮৪১ ডোজ, বোয়ালখালীতে ১৩ হাজার ৩৭২ ডোজ, চন্দনাইশ উপজেলায় ১৩ হাজার ৯৬৫ ডোজ, ফটিকছড়িতে ৩১ হাজার ৫২৫ ডোজ, হাটহাজারীতে ২৫ হাজার ৮৭৬ ডোজ, লোহাগাড়ায় ১৬ হাজার ৭৭৬ ডোজ, মিরসরাই উপজেলায় ২৩ হাজার ৮৯৬ ডোজ, রাঙ্গুনিয়ায় ২০ হাজার ৩১৭ ডোজ, রাউজানে ১৯ হাজার ৩৪৯ ডোজ, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৬ হাজার ৬৯৭ ডোজ, সাতকানিয়াতে ২৩ হাজার ৬২ ডোজ, সীতাকুন্ডে ২৩ হাজার ২৪৪ ডোজ। নগরীতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৫ ডোজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, আমি সবাইকে বলবো কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে টিকা নিন। যে কোনো ধরনের অবস্থার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। যিনিই টিকা নেবেন তাকে আমরা ১ ঘন্টা আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখবো। এছাড়া টিকা দেওয়ার আগেই গ্রহীতার স্বাস্থ্য পরিক্ষা করা হবে।
সান নিউজ/বিএস