ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামেই উৎপাদন হবে সাশ্রয়ী জ্বালানি হাইড্রোজেন গ্যাস। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) বর্জ্য থেকে এই গ্যাস উৎপাদন করবে। ২০ জানুয়ারি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদন প্লান্টের উদ্বোধন করেছে বিসিএসআই।
প্রতিষ্ঠানটির সায়েন্টিফিক অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ প্লান্টে শুরুতে দৈনন্দিন বর্জ্য ও বায়োমাসকে ফিডস্টক হিসেবে ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হবে। পরবর্তীতে পানি থেকে হাইড্রোজেন তৈরির প্রযুক্তিও বসবে।
তিনি জানান, এই হাইড্রোজেন এনার্জির মধ্যে বাংলাদেশের তিনটি বড় সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে। এরমধ্যে প্রথম হচ্ছে মিথেন বা এলএনজির বিকল্প হিসেবে যানবাহন, বাসাবাড়ি ও কারখানায় হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা যাবে, উৎপাদন করা যাবে বিদ্যুৎও।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রতি বছর জমা ২২৭ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্যকেই কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তৃতীয়ত, বায়ু দূষণের কারণে যে ক্ষতি হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার বাড়লে দূষণের সেই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, সাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন উৎপাদন এ প্রকল্পের অন্যতম মাইলস্টোন। দৈনন্দিন বর্জ্য ও বায়োমাসকে ফিডস্টক হিসেবে ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদনের পাইলট প্রসেস প্ল্যান্ট স্থাপন কাজ গত ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রথমবারের মতো সংযোজিত প্রসেস প্লান্টটি বাংলাদেশের গবেষণা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যার অনুকরণে বাণিজ্যিক উৎপাদনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হাইড্রোজেন এনার্জি ল্যাবের গবেষকদের মতে, প্রতি কেজি ডিজেল পুড়িয়ে পাওয়া যায় ৪৪ মেগাজুল শক্তি, আর মিথেন (প্রাকৃতিক গ্যাস) পুড়িয়ে পাওয়া যায় ৫৫ কিলোজুল। সেখানে হাইড্রোজেন ব্যবহারে প্রতি কেজিতে ১৪২ কিলোজুল শক্তি পাওয়া সম্ভব। যেখানে ১ কেজি পেট্রোল ব্যবহার করে একটি গাড়ি যেখানে ১৬ কিলোমিটার চলে, সেখানে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল কার ১ কেজি হাইড্রোজেন দিয়ে চলতে পারে ১০০ থেকে ১৩১ কিলোমিটার।
তবে যানবাহনের প্রচলিত সিলিন্ডার ট্যাংক দিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা যাবে না, ম্যাগনেশিয়ামের স্তরযুক্ত আলাদা ধরনের ট্যাংক লাগবে। তবে সেটার দাম প্রচলিত সিলিন্ডারের চেয়ে খুব বেশি হবে না। ট্যাংকের গাস থেকে শক্তি উৎপাদন করবে ফুয়েল সেল। আর তা যান্ত্রিক শক্তি হিসেবে চালাবে গাড়ি।
তাছাড়া যানবাহনে হাইড্রোজেন রিফিলের জন্য এখনই আলাদা স্টেশন লাগবে না। এখনকার সিএনজি স্টেশনগুলোই আলাদা একটি ইউনিট বসিয়ে কাজ চালানো যাবে। পরে বড় আকারে বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হলে আলাদা স্টেশন স্থাপনের কথাও ভাবা যাবে। সিএনজি ব্যবহার করলে বিস্ফোরণের যতটা আশঙ্কা থাকে, হাইড্রোজেন গ্যাস বা জ্বালানিতে সে শঙ্কা অনেকটাই কম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছে বিসিএসআইআর। ২০১৮ থেকে ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পানিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রযুক্তিও শিগগিরই সংযোজন হবে।
সান নিউজ/কেটি