নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা : খুলনার উন্নয়নে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) এর স্থবিরতা, উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জনভোগান্তি, অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণ এবং কেডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
খুলনার উন্নয়নে কেডিএর কাজের সাথে খুলনা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ মনে করেন দু’টি সংস্থার এ সমন্বহীনতা দূর এক সাথে কাজ করতে পারলে পরিকল্পিত আধুনিক নগর গড়ে তোলা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ মোহাম্মাদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত দুই দশক ধরে খুলনার উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা কেডিএর উন্নয়ন কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা, দীর্ঘসূত্রিতা এবং নানা ধরনের অনিয়ম। এর ফলে খুলনাবাসী তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, পিছিয়ে পড়ছে সম্ভাবনার খুলনা শহর। কেডিএ যে সংযোগ সড়কগুলো তৈরি করেছে তা এখন মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বাস্তুহারা সিটি বাইপাস সড়ক, খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে সিটি বাইপাস সংযোগ সড়ক দুটি এতই নিম্নমানের যে, মাত্র দুই বছরের মধ্যে সড়ক দুটি চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ময়ূরী আবাসিক প্রকল্প ২০১৩ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পের প্লটের লটারি হয় ২০১৬ সালে, একই বছরে ৪০ শতাংশ টাকা গ্রহণ করে কেডিএ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ গ্রাহকের টাকা পরিশোধ হয়ে গেছে কিন্তু প্লট কবে বুঝে পাবেন তা জানেন না অনেক গ্রাহক। এই প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের নামে চলছে নিম্নমানের কাজ। আবাসিক এলাকার ভেতরে যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, তা কতদিন টিকবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিগত চেয়ারম্যানের বিদায়ের সময়কালে কেডিএর অবরাদ্দকৃত ৩১টি প্লট নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। যেখানে ৯ লাখ টাকা কাঠাপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে তারা প্রতি কাঠা ৫ লাখ টাকা দামে বরাদ্দ নিয়েছে, যা নিয়ম বহির্ভূত এবং দুর্নীতির সামিল।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে কয়েকটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো:
কেডিএ এর চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ, অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প ও নিয়ম বহির্ভূত বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ, খুলনার উন্নয়নে ডিটেল এরিয়াসহ একটি মাস্টারপ্ল্যান জনগণের সামনে প্রকাশ, রূপসা বাইপাস শিপইয়ার্ড রোড, নিরালা রোড, গল্লামারি থেকে রায়ের মহল, আড়ংঘাটা থেকে রায়েরমহল সড়কের কাজ দ্রুত শুরু, প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়নে সকল অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রিতা ও দুর্নীতি বন্ধ, বিদায়ী চেয়ারম্যান আবুল মকিম সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করতে হবে। আগামী ৫০ বছরের একটি মাস্টার প্লান করা।
সাংবাদিক সম্মেলনে এই সকল দাবি বাস্তবায়নে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি কেডিএর সম্মুখে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে নগরবাসীকে সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. আবুল বাসার, মিজানুর রহমান বাবু, চৌধুরী মো. রায়হান ফরিদ, কোষাধ্যক্ষ মিনা আজিজুর রহমান, দৈনিক সময়ের খবরের সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্ল্যা, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, নাগরিক নেতা সুজন সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ, মো. মনিরুজ্জামান রহিম, মিজানুর রহমান জিয়া, প্রচার সম্পাদক মফিদুল ইসলাম টুটুল, জোবায়ের আহমেদ খান জবা, রকিব উদ্দিন ফারাজী, এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, মোল্লা মারুফ রশিদ, শেখ মুশার্রফ হোসেন, সৈয়দ এনামুল হাসান ডায়মন্ড, আহমেদ ইব্রাহিম তন্ময়, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান শরিফ শফিকুল হামিদ চন্দন, ডা. সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. রহিম, আতিয়ার রহমান প্রমুখ।
সান নিউজ/কেএ/কেটি