নিজস্ব প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ : মহাশোল বিলুপ্ত প্রায় একটি মাছ। সুস্বাদু এ মাছ ভোজন রসিকদের কাছে কদর থাকলেও দুর্লভ হওয়ায় লোভনীয় এ মাছটি এখন উচ্চমূলেও পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন পর দেশিয় প্রজাতির বিপন্ন মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ে সৃষ্ট খরস্রোতা সুমেশ্বরী নদী সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোণার দূর্গাপুরে প্রবেশ করেছে। অপরূপ সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম প্রকৃতির মধ্যদিয়ে বহমান পাহাড়ি ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি ও খরস্রোতা সোমেশ্বরী ও কংস নদী মহাশোলের আবাস ভূমি। নদীর পাথর-নুড়ির ফাঁকে ফাঁকে ‘পেরিফাইটন’ নামের এক রকমের শ্যাওলা জন্মে। যা মহাশোলের প্রধান খাদ্য। মহাশোল সর্বোচ্চ ১৫ মিটার গভীর পানিতে চলাচল করতে পারে। পানির উষ্ণতা ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাদের জীবনধারণের পক্ষে সহায়ক।
কদাচিৎ দু’একটি মহাশোল পাওয়া গেলেও প্রতিযোগিতামূলক দামে বেচাকেনা হয়। এই মাছ সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা কেজি দামে বিক্রয় হওয়ার কথা শোনা যায়। গত কয়েক বছর ধরে এ মাছ পাওয়া না গেলেও এবছর প্রবল বর্ষার কারণে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা মহাশোল ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।
জেলেদের কাছ থেকে ২৫ টি মহাশোল মাছ কিনে গবেষণা পুকুরে মজুত করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। জেলেরা এসব মাছ প্রতি কেজি ৩ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। প্রতিটি মাছের ওজন ১ কেজি থেকে সাড়ে ৫ কেজি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম কোহিনুর জানান, দেশিয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মহাশোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন এবং পোনা উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করার জন্য কয়েক বছর চেষ্টার পর এবার মহাশোলের ব্রুড মাছ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, দেশি মহাশোল মাছ দূর্লভ প্রজাতির। বাংলাদেশে যে ৬৪ প্রজাতির বিলুপ্ত মাছ রয়েছে, মহাশোল হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম।
আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই মাছটি সংগ্রহ করে পুকুরে ডমোনেস্টিক করে এর প্রজনন ও চাষাবাদ পদ্ধতি আবিস্কার করা। চলতি বছর ৫০ টি মহাশোল মাছ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫ টি মাহাশোল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মহাশোল একটি দামী এবং সুস্বাদু মাছ এবং এটি বিলুপ্তি তালিকায় আছে। বিশ্বে মহাশোল মাছের বহু প্রজাতি আছে।এবার দেশিয় প্রজাতির সোনালী মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনে মাঠে নেমেছে।
ইতোমধ্যে একটি প্রজাতির (নেপালী) মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল গবেষণায় সফল হওয়ায় পর দেশের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। অনেকেই পোনা নিয়ে পুকুরেই চাষ করছেন। শুধু মহাশোল নয়, হারিয়ে যাওয়া আরও ২৩ টি প্রজাতি মাছের কৃত্রিম প্রজনন সফলতার সাথে সম্পন্ন করে চাষি পর্যায়ে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
প্রসঙ্গত; বাংলাদেশে মহাশোলের দুটি প্রজাতি আছে যাদের নাম সোনালী মহাশোল (বৈজ্ঞানিক নাম Tor tor) এবং লাল-পাখনা মহাশোল (বৈজ্ঞানিক নাম Tor putitora)। প্রজাতি দুটি মহাবিপন্ন।
সান নিউজ/আবুল কালাম/এসএ