জাহিদ হাসান মাহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বটগাছের চারদিক জুড়ে সম্পন্ন হয়েছে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ নির্মাণের কাজ। মঞ্চের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়ে এখন চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। গত ২২ দিন থেকে চলছে মঞ্চের চারদিক দিয়ে নানা শিল্পকর্ম তৈরির কাজ। এতে বঙ্গবন্ধু মঞ্চের চারদিক জুড়ে আঁকা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু মঞ্চের চারপাশে ইতোমধ্যে বালু-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হয়েছে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস ও ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ। রয়েছে ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বিভিন্ন পরিস্থিতি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আগ্রাসন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ৬ দফা আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্র। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালি জাতির অসাম্প্রাদায়িক চেতনাকেও। বঙ্গবন্ধু মঞ্চের চারপাশে স্থান পেয়েছে পহেলা বৈশাখ উৎসবসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য ও বাঙালি সংস্কৃতির চিত্র।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মাটিলাপাড়া মহল্লার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে চিত্রশিল্পী এনামুল হক বলেন, গত ২০-২৫ দিন থেকে এ কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু মঞ্চের পশ্চিম দিক থেকে পহেলা বৈশাখ উৎসবের চিত্র দিয়ে শুরু হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাহাড়-পর্বত, এছাড়াও যেমনভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ঠিক সেই সঠিক ইতিহাসের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম দুই দিকেই বড় করে বঙ্গবন্ধুুর ছবিসহ লেখা রয়েছে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ।
গত ১০-১২ বছর থেকে এসব শিল্পকর্মের কাজ করলেও বঙ্গবন্ধু মঞ্চের মতো শিল্পকর্মের কাজ এই প্রথম করছেন এনামুল। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও ১০-১২ দিন লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন ডিজাইন ও পার্কে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন শিল্পকর্মে এই প্রথম বলে জানান আরেক শিল্পী গোলাম কবির। তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যেসব ডিজাইন বাছাই করে দেয়া হচ্ছে, আমরা সেগুলোই নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে কাজ করছি। আশেপাশের অনেক মানুষ এসব দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বিষয়টি আসলেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই যাতায়াত করে নবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রওশনারা পপি। সে জানায়, প্রতিদিন যাওয়ার পথে নিজের অজান্তেই চোখ চলে যায় বঙ্গবন্ধু মঞ্চের চারপাশে তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্মের দিকে। কয়েকবার দাঁড়িয়ে কাছ থেকে এসব কাজ দেখেছি। খুবই ভালো লাগছে এসব চিত্র দেখে। বিশেষ করে, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন চিত্র দেখে মনে হয়, স্বচক্ষে দেখছি। এখানে দেখা যায়, পাক হানাদার বাহিনী যুদ্ধের সময়ে কিভাবে এদেশের মা-বোনদের প্রতি অত্যাচার চালিয়েছে।
এমন উদ্যোগের জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাংবাদিক ওলিউজ্জামান রুবেল বলেন, এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। শুধুমাত্র মঞ্চ তৈরি না করেই এর চারপাশে সৌন্দর্য বর্ধন ও দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দেশের প্রকৃত ইতিহাস, সংগ্রামের বিষয়গুলো দেখতে ও জানতে পারবে। এছাড়াও পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন শিল্পকর্ম দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু মঞ্চে। আগামী প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের প্রকৃত তথ্য ও ইতিহাস জানাতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন চলছে নির্মাণের শেষ মূহুর্তের কাজ, সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে রং করা হলে এর চমৎকার সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে দর্শনার্থীদের। এসব শিল্পকর্মের ফলে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মাঝে দেশপ্রেম আরও জাগ্রত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সান নিউজ/জেএইচএম/এনকে