আব্দুল্লাহ হেল বাকী, নওগাঁ : নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। এই এলাকায় মুসলমান, খ্রিষ্টান ও সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ প্রায় ২ লাখ লোকের বসবাস। দিন দিন বাড়ছে জনসংখ্যা ও বসতবাড়ী, কমছে আবাদি জমি। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ধামইরহাটের অবহেলিত আদিবাসীপল্লীর তালঝারী গ্রামে ৫ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে তালঝারী কৃষি খামার। সেখানে স্থানীয়রা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে প্রাপ্ত মজুরী দিয়ে মেটান তাদের পরিবারের চাহিদা। আবার স্থায়ীভাবে ২৫ জন শিক্ষিত বেকার যুবক ওই খামারে কাজ করে এনেছেন পরিবারের অর্থনৈতিক মুক্তি। এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তালঝারী কৃষি খামার এর স্বত্বাধিকারী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ধামইরহাটের কৃতি সন্তান প্রকৌশলী ড. ফিজার আহমেদ।
নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন এখন সময়ের দাবী বাঁচার জন্য খাদ্য চাই নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই। এই স্লোগান ভাবার্থ নিয়ে ২০১৫ সালে ধামইরহাট উপজেলার ৩ কিলোমিটার দক্ষিনে আদিবাসী অধ্যুষিত তালঝারী গ্রামে ৫ বিঘা জমির উপর কৃষি খামার চালু করেন প্রকৌশলী ড. ফিজার আহমেদ।
কৃষি খামারের বহিরাবরণ চাকচিক্যে দৃষ্টিনন্দন না হলেও ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে আধার সৃষ্টি করেছেন ড. ফিজার আহমেদ। উন্নত জাতের গরুর পাশাপাশি গাড়ল জাতীয় ভেড়া, বিভিন্ন প্রজাতির মুরগীর খামার নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি লেয়ার, ব্রয়লার, সোনালীসহ বিভিন্ন মুরগী দোকানের জন্য এবং বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই খামার। গরু থেকে নিরাপদ দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য এখন বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। খামারের পাশে নিজস্ব জমিতে রাসায়নিক সার ছাড়াই ঘাস, গম, ভুট্টা, ইত্যাদি থেকে গরু-মুরগী ও গাড়লের খাদ্য তৈরী হয়। এছাড়াও গরুর গোবর দিয়ে ভার্মিকম্পোষ্ট স্যার তৈরী ও মুরগীর লিটার দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট দ্বারা উৎপাদিক বায়োস্যালারী দিয়ে জ্বালানির সুব্যবস্থাসহ বায়োগ্যাসের উচ্ছিষ্ট বর্জ্য দিয়ে জমিতে গো খাদ্য চাষাবাদের ভূমিকা রাখছে।
এই খামারে সংযোজন করা হয়েছে কম্পিউটার প্রযুক্তি সিস্টেম। ফলে এটি এখন স্মার্ট কৃষি খামারে পরিণত হয়েছে। দক্ষ পরিচালনায় খামার থেকে যেমন কেমিক্যাল বিহীন ডিম উৎপাদন হচ্ছে, তেমনি মুরগীর নিরাপদ মাংস সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই কৃষি খামার। কোন কোন ফ্যাক্টরী মালিক ও বিত্তশালীরা অর্থের লোভে কেমিক্যাল মিশিয়ে রংচং এর চমক লাগানো মোড়কে বাজারে ভেজাল পণ্য বিক্রি করে লভ্যাংশ গোনেন। ভেজালের ভিড়ে এই কৃষি খামার পুষ্টিকর খাদ্যপণ্য সরবরাহে অতুলনীয় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ধামইরহাট পৌরসভার মেয়র আমিনুর রহমান বলেন, সরকারী সহযোগিতা পেলে কৃষি খামারটি একদিকে যেমন সারাদেশের মধ্যে মডেল খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে তেমনি বাজারে দুষণমুক্ত ও নির্ভেজাল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হবে। এলাকাবাসী ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ তালঝারী কৃষি খামারে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জোর দাবী জানিয়েছেন।
ধামইরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সেলিম রেজা বলেন, তালঝারী কৃষি খামার একটি আদর্শ খামার এই খামারে উৎপাদিত ভার্মি কম্পোষ্ট স্যার শাক-সবজি সহ ফসল উৎপাদনে অত্যন্ত কার্যকরী। উপজেলা কৃষি বিভাগ তালঝারী কৃষি খামারকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে সকল সহযোগিতা প্রদান করবে।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় খামারটির গতিশীলতার পাশাপাশী এটি একটি কৃষি গবেষণার অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হবে বলে মনে করেন তালঝারী কৃষি খামার এর উদ্দ্যোক্তা আইওটি ও ডেটা সায়েন্স ভিত্তিক কৃষি গবেষক ড. ফিজার আহমেদ।
সান নিউজ/এএইচবি/এনকে