নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : কথিত যুবলীগ নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া শামীমকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় এ আদেশ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দিয়েছেন। এদিন কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে শামীমকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, ‘জাল কাগজপত্র দাখিল করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭৫ কোটি টাকার একটি ভবন নির্মাণের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই জনের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছিল। ওই মামলায় কারাগারে থাকা শামীমকে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন আছে।’
অভিযুক্ত মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম যিনি জি কে শামীম নামে পরিচিত, তাকে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেওয়া জি কে শামীম ঢাকার জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
মামলায় অভিযুক্ত অপরজন হলেন- দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরী। ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবনের (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন) দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্সকে (জিকেবিএল) ৭৫ কোটি এক লাখ ২৯৫ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর চুক্তি হয়।
দরপত্রের সঙ্গে শর্ত অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠান আগের পাঁচ বছরে কমপক্ষে একটি ৩৫ কোটি টাকার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ সন্তোষজনকভাবে সমাপ্তির সনদপত্র জমা দেয়। আগের পাঁচবছরে গড়ে কমপক্ষে ৪১ কোটি টাকার টার্নওভার এবং ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিকুইড অ্যাসেট সংক্রান্ত কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের অভিযোগ- জি কে শামীম ও ফজলুল করিম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সাথে একক মালিকানাধীন ফার্মের নাম সংযুক্ত করে নিবন্ধনের সনদ জমা দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো চুক্তির কাগজপত্র জমা দেননি। এছাড়া নিবন্ধিত প্রকৃত শেয়ার সংখ্যার চেয়ে বেশি শেয়ার দেখানো হয়। টেন্ডার নোটিশের ১৯ (ডি, ই ও এফ) নম্বর শর্তানুযায়ী ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ও টার্নওভার সংক্রান্ত যে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয় তাও জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করা বলে দুদকের অভিযোগ।
দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে অতি সূক্ষ্ম তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে ওই কার্যাদেশ হাসিল করে নেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জেরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে কৌশলে হত্যা করা হয়েছিলো বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করছে সিআইডি।
সান নিউজ/এসএম