মো. নিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে অজ্ঞাত (১১) বছরের এক শিশু গুরুতর আহত হয়ে ২৯ দিন যাবত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এখনও আহত ওই শিশুর পরিবারের পরিচয় মিলেনি। তবে শিশুটি অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন শিশুটি চোখ মেলতে পারছে। মুখে খাবার দিলে তা খেতে পারছে।
অজ্ঞাত শিশুর পিতৃস্নেহে পাশে দাঁড়িয়েছেন সার্জারি বিভাগের ঝাড়ুদার উজ্জ্বল। তার বাড়ি থেকে খিচুড়ি, সেমাই, সুজি, দুধ, বেলের সর্বত নিয়ে নিজেই খাওয়ায়ে দিচ্ছে। পায়খানা-প্রশ্রাব পরিষ্কার থেকে শুরু করে গোসল করিয়েও উজ্জ্বল। ভর্তির দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ওই শিশুর যাবতীয় ওষুধপত্রও সংগ্রহ এবং কিনে দিচ্ছে উজ্জ্বল।
সরেজমিনে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে গিয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইনচার্জ আকলিমা আক্তার ও রোকাইয়া আক্তারের সাথে শিশুটির শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে চাইলে সান নিউজকে জানান, শিশুটি আগের চাইতে এখন শারীরিকভাবে অনেকটা উন্নত হয়েছে।
ঝাড়ুদার উজ্জ্বল সাথে শিশুটির দেখাশুনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অজ্ঞাত শিশুটি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। ওইদিন থেকে হাসপাতালে সার্জারি চিকিৎসক, নার্সদের চিকিৎসা সেবায় আলহামদুলিল্লাহ শিশুটির শারীরিক অবস্থা অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন ওই শিশুটি চোখ মেলতে পারে। মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টাও করছে। যেহেতু ওই শিশুর কেউ নেই তাই ঢাকা না নিয়ে আমরাই দিয়ে যাচ্ছি তার চিকিৎসা ও সকল সেবার ব্যবস্থা।
ওই শিশুর যাবতীয় ওষুধপত্র ও খাওয়া-দাওয়া হাসপাতাল তহবিল ও বিভিন্ন সামাজিক-মানবিক সংগঠন থেকে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু সাংবাদিক অজ্ঞাত শিশুটির খোঁজ খবরও রাখছেন। দ্রুত শিশুটিকে কিভাবে সুস্থ করে তুলা যায় অনেকেই এগিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন সান নিউজকে জানান, যখন শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকেই শিশুটি অসচেতন ছিল। এখন শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। ওই শিশুর সকল ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম সান নিউজকে জানান, যেহেতু শিশুটি অজ্ঞাত তাই আমরা তার পরিবারের লোকদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে জানতে পারছি যে, ওই শিশুর মা এসে একদিন দেখে করে গেছেন। পরবর্তীতে শিশুটির আর কোন খোঁজ রাখেননি সে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি খুব শীঘ্রই পরিবারের খোঁজ পাবো।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি স্থানীয় এক ব্যক্তি দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট রেলপথের আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বৈকণ্ঠপুর এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা একটি শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলেন। তার মাথায়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত থাকায় সেখানে শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। এখনও তার পরিবারকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে ওই অজ্ঞাত শিশুর মা পরিচয়ে একজনের খোঁজ পাওয়া গেলেও সর্বশেষ তাকেও আর দেখা যায়নি।
সান নিউজ/কেটি