নিজস্ব প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সহিংসতা এড়াতে প্রশাসনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভোটাররা। এ নিয়ে তারা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আকুতিও জানিয়েছেন।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সহিংসতার আশঙ্কায় ৩২ জনের নাম-পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। আগামীকাল শনিবার (৩০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সুষ্ঠু ও সহিংসতা রোধে জেলা প্রশাসক, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার ও র্যাবের কাছে ওই ওয়ার্ডের ভোটার রাকিবুল হাসান অভিযোগ করেন। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করা হয়।
তবে জেলা পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, ৩২ হোক আর ৩০০ জনই হোক, ভো কেন্দ্রে কোনো সহিংসতার সুযোগ নেই। নির্বাচনে কোনো সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না। পুলিশ প্রশাসন থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপুর বাজার এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন রাজু ও ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান ফয়সাল মালের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংর্ঘষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলির আওয়াজ শোনা গেছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। পরে রামগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী দলবল নিয়ে আগের রাত ও ভোটের দিন সোনাপুর ওয়ার্ডে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভোটাররা চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে রয়েছেন। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনেও ১ নম্বর সোনাপুর ওয়ার্ডের আহম্মদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য সোনাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছিল। এজন্য নির্বাচনকে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত রাখতে ওই দুই কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দাবি এলাকাবাসীর। অভিযোগের সঙ্গে দুটি কেন্দ্রে সহিংসতা করতে পারে এমন ৩২ জনের নামের তালিকাও প্রশাসনের হাতে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে, এ নির্বাচনে নোয়াখালীর চাটখিল ও লক্ষ্মীপুর সদরের বশিকপুর, চন্দ্রগঞ্জ থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে চুক্তি করেছেন বলে খবর ছড়ায়। ভোটের দিন তারা ওইসব কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারেরও আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই দুটি কেন্দ্র ছাড়াও আরো ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হলো ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আউগানখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামগঞ্জ স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কলছমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাজিরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর দরবেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য আঙ্গারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রশাসনও এসব কেন্দ্রের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। ইতোমধ্যে ৩টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন। শনিবার ওই ৯টি কেন্দ্রে কাউন্সিলরদের ভোট নিয়ে ব্যাপক সহিংসতার ও রক্ত ঝরার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু তাহের বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সতর্ক রয়েছি।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো শনাক্ত করেছি। রামগঞ্জ থানা পুলিশের বাহিরেও স্পেশাল ব্রাঞ্চ, গোয়েন্দা (ডিবি) ও সাদা পোশাকদারী পুলিশ কেন্দ্র নিরাপত্তায় থাকবে। আমি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক পরিদর্শনে আছি।
সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রিয়াজুল কবির বলেন, আমরা কাজে বিশ্বাসী। রামগঞ্জের নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। ৩২ জন নয়, ৩০০ জন এলেও কোনো সহিংসতা করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, রামগঞ্জে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৪টি ভোটকেন্দ্রে ৩৬ হাজার ৩২১ ভোটার রয়েছেন।
সান নিউজ/জেইউবি/কেটি