নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তার ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব পদ টেকাতে আপনি অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের টেলিফোনে তাকে ‘তুমি আমার পদ খাবে নাকি?’ জিজ্ঞেস করেছেন বলেও জানান কাদের মির্জা।
এক পর্যায়ে কাদের মির্জা বক্তব্যের ফাঁকে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘এক দফা এক দাবি, একরাম তুই কবে যাবি।’ একরাম চৌধুরীর বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দাবিতে আগামী রোববার (৩১ জানুয়ারি) কোম্পানীগঞ্জে আধাবেলা হরতাল পালিত হবে। এ সময় কোনো কাক-পক্ষীও উড়তে পারবে না।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কিভাবে স্যারেন্ডার করলেন? আমার আব্বা কি রাজাকার ছিলেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার আব্বা মোশারফ হোসেন রাজাকার নয়, তিনি বসুরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর যারা আমার পরিবারকে রাজাকার বলছে, তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন?
বুধবার সন্ধ্যায় বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে কোম্পানীগঞ্জ নাগরিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত নবনির্বাচিত মেয়রের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি বক্তব্য দেননি।
তিনি বলেন, অপরাজনীতির কাছে মাথা নতকারীরা আমার ভোটারদেরকে অভিনন্দন পর্যন্ত জানায়নি। যে দলের (আওয়ামী লীগ) জন্য সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছি, তারাও খবর নেয়নি। সংবর্ধনার জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে কাদের মির্জা বলেন, ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম দিয়ে যারা কথা রাখেনি, তারা অপশক্তির কাছে মাথা নত করেছে।
আবদুল কাদের মির্জা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। আমার ছেলে মেয়েদের সেই চাকরি কই? অন্তত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৫শ ও কবিরহাট উপজেলায় ৫শ ছেলে-মেয়ের চাকরি যদি না হয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব।
গ্যাস দেবেন বলেছেন, কোন ষড়যন্ত্রে গ্যাস আসেনি তা জানি। একরাম চৌধুরী আমার গ্যাস ফিল্ডের নামটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। গ্যাস পাওয়া গেছে কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুরে আর নাম দেয়া হয়েছে কবিরহাটের সুন্দলপুরের। এসব বললে তিনি (ওবায়দুল কাদের) নাকি অসুস্থ, অসুস্থ হলে অপশক্তির কাছে মাথানত করেন কিভাবে?
মন্ত্রীর (ওবায়দুল কাদের) কাছে লোকজন কোনো অভিযোগ নিয়ে যেতে পারে না উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, একরাম চৌধুরীর চামচারা সব সময় মন্ত্রীকে ঘিরে রাখে।
কাদের মির্জা আরও বলেন, বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছেন? বহিষ্কার করবেন, বহিষ্কার করলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জয়গান ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলব। গ্রেফতার করবেন? ১৯৮২ সাল থেকে জেল খেটে আসছি। এখন যারা ষড়যন্ত্র করেন, তখন তো তারা মায়ের পেটে ছিলেন।
তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন করতে অস্ত্র লাগে না। আমরা একরাম চৌধুরীর মতো নই যে নিজের সন্তানের হাতে অস্ত্র তুলে দেব। যেদিন আমার সন্তান অস্ত্র হাতে নেবে, সেদিন যেন আমার মৃত্যু হয়।
তিনি একরাম চৌধুরীর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার বাবা আমার ছোট, তুমি আমার ছেলের মতো। তোমার বাবার মুখের কথা- তুমি বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষিত, চেহারাও ভালো। তুমি তোমার অস্ত্র ফেলে দিয়ে শান্তির রাজনীতিতে আস। কথা দিলাম আমরা তোমাকে সহযোগিতা করব।
তিনি আরও বলেন, একরাম চৌধুরী টেলিভিশন লাইভে বলেছেন আমি নাকি অসুস্থ, আমার নাকি চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি বলব আমার নয়, তার (একরাম চৌধুরী) চিকিৎসার প্রয়োজন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ফরিদা ইয়াছমিন মুক্তা এবং নাজমা বেগম শিপার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, সহ-সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল, বামনী কলেজের অধ্যক্ষ রাহবার হোসেন, মেয়রের সহধর্মিণী আক্তার জাহান বকুল, বিশিষ্ট কলামিস্ট রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, আমেরিকা প্রবাসী রমেশ চন্দ্র সেন, সেলিম চৌধুরী ভিপি বাবুল, বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল, বসুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরজুমান পারভীন, সাবেক ছাত্রনেতা জহিরুল ইসলাম তানভীর, নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাশিক মির্জা কাদের প্রমূখ।
এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এসএম