এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি: আসন্ন ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঝালকাঠির প্রচীনতম নলছিটি পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে আ’লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ খানের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আ’লীগের বিদ্রোহী মাসুদ খান।
নানা আইনি জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে গত ৫ জানুয়ারি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে না পেয়ে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পান তিনি। এরপরই নলছিটি পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র মোবাইল প্রতীক নিয়ে মাঠে নামায় নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। অন্য জেলা ও উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের দফায় দফায় নৌকার প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন।
অপরদিকে, প্রশাসনের নিরাপত্তা প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ফিরে মাঠে শক্ত অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন মাসুদ খান। এ নির্বাচনে মোট ৪ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থীত ধানের শীষের প্রার্থী মজিবুর রহমান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা মো. শাহ জালাল অংশ নিচ্ছেন। আইনি জটিলতায় প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার পর ১৩ জানুয়ারি শুনানী শেষে প্রার্থীতা ফিরে পান তিনি। একই সঙ্গে তাকে প্রতীক বরাদ্দ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেয়ার জন্য রিটানিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের যৌথ বেঞ্চ। কিন্তু ঐ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এতে ৮ সপ্তাহের জন্য এ আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে মাসুদ খান তার প্রার্থীতা ফিরে পেতে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার শুনানী শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির সমম্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন। এবং মাসুদ খানের প্রার্থীতা বহাল রাখার নির্দেশ দেন বলে জানান মাসুদ খানের আইনজীবী আকতার রসুল মুরাদ।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ খান আইনি জটিলতায় আটকে থাকায় নলছিটিতে ফুরফুরা মেজাজে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন নৌকা প্রতীকের আবদুল ওয়াহেদ খান। কিন্তু প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনী এলাকায় আসেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ।
২নং ওয়ার্ডের মুদি ব্যবসায়ী মো. বেল্লাল শরীফ (৩৫) বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে আসায় টেনশনে পরেছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ওয়াহেদ কবির।
৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার স্কুল শিক্ষক প্রদীপ দাস (৫৫) বলেন, মাসুদ খান এই পৌরসভার সাবেক মেয়র। তার আমলে এলাকার বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তাছাড়া সে জনবান্ধব একজন নেতা। তার প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় শুধু নৌকার প্রার্থী নয়, দলীয় সকল নেতা কর্মীদের টেনশন বেড়ে গেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে নির্বাহী ম্যাজিট্রে নিয়ে র্যাব এবং পুলিশের প্রহরায় নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র কেএম মাসুদ খান।
রাতেই তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, নলছিটিতে যাতে তিনি প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য পথে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ভাড়া করা বহিরাগতদের দিয়ে তার উপর হামলার প্রস্তুতিও নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়াহেদ কবির। সরকার দলের প্রার্থীর তান্ডব বন্ধ করে, পৌর এলাকাকে বহিরাগত মুক্ত করে প্রশাসন যদি নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে না পারে তাহলে কাফনের কাপর পরে প্রচারকাজে নামবেন বলেও ঘোষণা দেন মাসুদ। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বায়েষ্ট হওয়া রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সরিয়ে নিতেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দাবি জানান তিনি।
মাসুদ খানের অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ সমর্থীত মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ কবির বলেন, সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা বিনা বাঁধায় নিবির্ঘ্নে যার যার ভোট চাইতে ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, পোষ্টার টানাচ্ছেন এবং মাইকিং ও মিছিল করছেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয় সরকার নিরপেক্ষ ভোটের মাঠ তৈরি করে দিয়েছেন।
বিএনপির সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী মো. মজিবুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত থাকায় তিনি জোরেসোরে নির্বাচনী প্রচারে নামছেন না।
নলছিটিতে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি দাবি করে মজিবুর রহমান আরো বলেন, ভোটাররা নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বিনা বাধায় নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না সে বিষয়ে তিনি শংকিত।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা মো. শাহ জালাল বলেন, তিনি প্রাতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই ভোটারদের বাড়িবাড়ি যাচ্ছেন ভোট চাইতে। তার কর্মী-সমর্থকরাও আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার কার্যসম্পাদক করছেন। নলছিটির ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ বিরাজমান থাকায় তিনি নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানান।
ঝালকাঠি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান মুন্সি বলেন, এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১২০৫১ এবং নারী ভোটার ১২০৫০ জন। এবারের নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী মেয়র পদে এবং ৯টি ওয়ার্ডে ৪০ জন প্রার্থী সাধারণ কাউন্সিলর পদে ও ১৩ জন প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩০ জানুয়ারি ১৩টি কেন্দ্রের ২৬টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি বুথেইে ব্যলট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সান নিউজ/কেটি