ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : চসিক নির্বাচনে ২০টি ওয়ার্ডকে সংঘাতপূর্ণ এবং ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। ফলে এসব ওয়ার্ড ও ভোট কেন্দ্রে ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘটিত সহিংসতা, প্রার্থীদের অবস্থান, বিগত নির্বাচন পরিস্থিতি বিবেচনায় চসিকের ২০টি ওয়ার্ডকে সংঘাতপূর্ণ ও ৪১৭ ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিএমপি। ফলে ভোটের নিরাপত্তায় সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকেই মাঠে নেমেছে নগর পুলিশের ৭ হাজার ২৫৯ সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রায় ৯ হাজার সদস্য।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, চসিক নির্বাচনে নগর ও হাটহাজারী উপজেলা মিলিয়ে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এরমধ্যে অস্ত্রধারীসহ ছয়জন করে পুলিশ সদস্য ও ১২ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর এই বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ চার জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য থাকবে।
এছাড়া নগরীর ২০টি ওয়ার্ডকে অত্যন্ত সংঘাতপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- ২ নং জালালাবাদ, ৪ নং চান্দগাঁও, ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর, ৮ নং শুলকবহর, ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী, ১২ নং সরাইপাড়া, ১৩ নং পাহাড়তলী, ১৪ নং লালখান বাজার, ১৫ নং বাগমনিরাম, ১৬ নং চকবাজার, ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া, ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া, ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া, ২২ নং এনায়েতবাাজার, ২৮ নং পাঠানটুলি, ৩০ নং পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৬ নং গোসাইলডাঙ্গা, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ও ৪১ নং দক্ষিন পতেঙ্গা।
ফলে এসব ওয়ার্ডে কেন্দ্রের বাইরে টহল পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তৎপর থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকবে নগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কাউন্টার টেররিজম ও সোয়াট।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সার্বিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৬৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের দিন মাঠে সক্রিয় থাকবেন। তাদের নির্দেশনায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে কাজ করবেন বিজিবি সদস্যরা। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে কাউন্সিলর পদ নিয়ে অনেকগুলো ওয়ার্ডেই সংঘাতের আশংকা রয়েছে। ভোটের প্রচারণায় এরই মধ্যে প্রাণ গেছে দুজনের। এমন পরিস্থিতিতে সংঘাতের আশঙ্কায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান নিয়ে সংস্থাটি নির্বাচনী সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা দেবে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তত্ত্বাবধানে রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম সিটি ইউনিট এই কর্মসূচিটি চালাচ্ছে।
তিনি জানান, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার সরঞ্জাম নিয়ে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে। তাদের দুটি মাইক্রোবাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স সম্ভাব্য নির্বাচনী সংঘাতে আহতদের চিকিৎসা ও আনা-নেওয়ার কাজ করবে।
রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি আবদুল জব্বার বলেন, প্রাথমিকভাবে নগরীর জামালখান, বাকলিয়া, মোগলটুলীর মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা বেশি সক্রিয় থাকবেন। তবে নজর থাকবে ৪১টি ওয়ার্ডের সবকটিতেই। তুলনামূলক কম আহতদের মাইক্রোবাসেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। কারও অবস্থা গুরুতর হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেলে পাঠানো হবে।
সান নিউজ/কেটি