ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : মামলা-হামলা আর হুমকির পরও ভোটের মাঠে শেষটা দেখতে চান বিএনপির নেতারা। ধরপাকড় ও এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগে গত মেয়র নির্বাচন ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মাঝপথে সরে আসলেও এবার লড়ে যেতে চান তারা।
সেজন্য কৌশলগত কারণে ধরপাকড় ও হয়রানি এড়াতে এবার মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের দুই সেট এজেন্ট প্যানেল প্রস্তুত করেছে বিএনপি নেতারা। তাদের ভাষ্য, সরকারদলীয় কর্মীরা এজেন্টদের কোন একজনকে বাধা দিলে যাতে অন্যজনকে ভোট কেন্দ্রে পাঠানো যায়।
এজেন্টদের যাতে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত অনুরোধও করা হয়েছে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, চসিক নির্বাচনের প্রচারণায় গত ২১ দিনে ১২ মামলায় বিএনপির হাজারও নেতাকর্মীকে বন্দি করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করেছে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে। নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেকারণে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে গণগ্রেপ্তারের কারণে দলীয় কর্মীরা এখন এলাকাছাড়া। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এখন আত্মীয়স্বজনের বাসায় আত্মগোপন করেছেন। এমনকি বাসায় না পেলেও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ভোটের দিন নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে আসছে। সে কারণে প্রশ্ন উঠেছে ভোটের দিন ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬টি ভোট কক্ষের জন্য পোলিং এজেন্ট পাওয়া যাবে কিনা। সব বিবেচনায় নিয়ে শুধুমাত্র ভোটের মাঠে থাকতে দুই সেট পোলিং এজেন্ট প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান আবুল হাশেম বক্কর।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ভোটের আগেই আতঙ্ক ছড়াতে নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এতেও আমাদের নির্বাচন থেকে সরানো যাবে না। আমরা শেষটা দেখতে চাই। আমাদের এজেন্টদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দমকি দিলেও আমরা কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ করব। কৌশলগত কারণে আমরা দুই সেট এজেন্ট নিয়োগ করেছি। কোনও কারণে একজন মিস হলে অন্যজনকে নিয়োগ করব।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। আবার অনেক কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দিয়েছে। এবারও যদি সেরকম হয় তাহলে করার কিছু নেই। এরপরও বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে উন্মুখ হয়ে বসে আছে। আমরা কৌশলগত কারণে দুই সেটা এজেন্ট প্যানেল তৈরি করে রেখেছি। যতই বাধা আসুক আমরা ভোটের মাঠের শেষটা দেখে ছাড়ব।
চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, রাত পোহালেই চসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এতে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি স্থায়ী ও দুটি অস্থায়ী।
তিনি জানান, চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬টি ভোটকক্ষে হিজড়ারা এবারও নারী ও পুরুষ সারিতে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে।
উল্লেখ্য, চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২২৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী লড়ছেন।
সান নিউজ/কেটি