হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর : তিস্তার চরাঞ্চলে ফিরেছে চাষাবাদ। হাসি ফুটেছে নদীভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে। এসব পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকে পড়েছে চাষাবাদে। নদীতে বিলীন হওয়া জমির ফসল ঘরে তুলতে পেরে খুশি এখন অনেকেই।
তাই নানান ফসলে ভরে উঠেছে রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিস্তার বুকে জেগে উঠা প্রায় অর্ধশত বালুচর। চলতি মৌসুমে মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। মরিচসহ নানা ফসলে ভরে উঠেছে তিস্তার চরাঞ্চল।
রংপুরের এই তিনটি উপজেলার মধ্যদিযে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের শিকার হয় তিস্তা নদী কবলিত এলাকার পরিবারগুলো। তবু তারা জীবন জীবিকার তাগিদে তিস্তায় জেগে উঠা চরে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে আশার আলো জাগায়।
পীরগাছা উপজেলার চর ছাওলা, কিশামত ছাওলা, গাবুড়ার চর, শিবদেব চর, চর ছাওলা, কামারের হাট ও তাম্বুলপুর, রহমতচর, নামাচর, চর রহমত, কাউনিয়া উপজেলার চরগনাই, বুড়িরহাট, হরিশ্বর, প্রাণনাথ চর, গদাই চর, নাজিরাদহ, চর চতুরা, হারাগাছ, চর পল্লীমারী ও গঙ্গচড়া উপজেলার চর ইছলী, গজঘন্টা, চর ছালাপাক, চর লক্ষীটারি, এসএকএস বাজার, বড়াইবাড়িসহ প্রায় অর্ধশত জেগে উঠা তিস্তা নদীর চর এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। চরাঞ্চলের হাজারো একর জমিতে এখন চাষাবাদ করা হচ্ছে নানা প্রজাতির ফসল। বিশেষ করে মরিচ, গম, ভুট্টা, আলু, বেগুন, পিঁয়াজ, রসুন, টমেটো, বাদাম, সরিষা, তিল, তিশি, তামাক, কুমড়া ও তরমুজসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে পীরগাছা উপজেলার কিশামত ছাওলা গ্রামের বেলাল হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, এবারে নিজে ১ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমি থেকে ১৫ হতে ২০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি হয়। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে মরিচ তোলা যায়। স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় চরের কৃষকরা এখন মরিচসহ নানাবিধ তরিতরকারি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
কাউনিয়ার চর গনাই গ্রামের আলেফ উদ্দিন ও মমিনুল ইসলাম জানান, মরিচের দামও এখন ভালো। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পীরগাছা উপজেলার পাওটানাহাটের ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান,স্থানীয় মরিচের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে মরিচ কিনে বিক্রি করলে লাভ বেশি হয়। চরাঞ্চলের জমিতে তরিতরকারির আবাদ এখন ভালো হয়। সে কারণে চরের মানুষ অনেক খুশি।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমুর রহমান জানান, পলি জমে থাকার কারণে চরের জমি অনেক উর্বর, এ কারণে যেকোনো প্রকার ফসলের ফলন ভালো হয়।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, চরের কৃষকরা নিজে পরিজন নিয়ে জমিতে কাজ করেন। সেই কারণে তারা অনেক লাভবান হন। তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।
সান নিউজ/এইচএস/এনকে