নিজস্ব প্রতিনিধি, ভোলা : ভোলার বোরহানউদ্দিনে নিজ গরু নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় চোর চোর বলে স্থানীয়রা রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেছে ইয়ামিন কাজী নামে এক ব্যবসায়ীকে। এ ঘটনায় আহতের বাবা শহীদুল্যাহ কাজী বুধবার (১৩ জানুয়ারি) অভিযোগ দায়ের করলে ও শুক্রবার রাতে মামলা হয়।
এদিকে, মামলার পর ৩ আসামি আগাম জামিনে রয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।
তবে বাদী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশ ধরছে না। এ সুযোগে তারা আগাম জামিন নিচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাহলে কি আমরা কোন বিচার পাব না?
এদিকে, সরেজমিন পরিদর্শন করে কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী লোমহর্ষক এ ঘটনার বর্ণনা দেন। তারা বলেন, ঘটনার সময় ইয়ামিন কাজী দুহাত তুলে তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান। একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে তিনি বলেন, আমাকে বেঁধে রেখে আপনারা যোগাযোগ করুন আমি চোর কি না। কিন্তু কেউ তার কথা শুনিনি। যে যেভাবে পারছে নির্মমভাবে তাকে আঘাত করছে।
ভুক্তভোগী বোরাক ড্রাইভার বলেন, কত রকম আকুতি-মিনতি করে বলছি, আমরা চোর না।আমাদেরকে না মেরে পুলিশের হাতে দিন। আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে আপনারা জিগান। কেউ আমাদের কথা শুনেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ফিরোজ জানান, এসআই বিকাশ এসে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার না করে উল্টো ইয়ামিনের হাতে হাতকড়া লাগান।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার বিকালে হামলা অংশগ্রহণকারী কয়েকজনকে পৌরবাজারে দেখা গেছে।
আহতের বাবা শহিদুল্যাহ কাজী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে তার ছেলে ইয়ামিন বাডড়ি থেকে অটোরিক্সায় (বোরাক) করে ২টি বাছুর গরু নিয়ে কুতুবা ইউনিয়ের ৪নং ওয়ার্ডে তার শ্বশুর ছিদ্দিক মাতাব্বরের বাডড়িতে রওয়া হয়। পথিমধ্যে শান্তির হাট বাজারের পূর্বপাশে পদ্মা ব্রিকস্ এর সামনে সকাল ১১টায় পৌঁছালে স্থানীয় ২০-২৫ জন তাদের অটোরিক্সা (বোরাক) এর গতিরোধ করে। তারা গাড়িতে থাকা বাছুর গরু ২টি নিয়ে যেতে টানাহেচড়া শুরু করেন। একপর্যায় ইয়ামিন গরু দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তাকে গরু চোর আখ্যা দেয়। গরুর রশি দিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে, অবস্থা খারাপ দেখে কয়েক জন তাকে বোরহানউদ্দিন সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ঘটনার একদিন পর স্থানীয় ইউপি সদস্য বিষয়টি মিমাংসার জন্য বুধবার দিন ধার্য করে। ওই ইউপি সদস্য বিষয়টার মিমাংসা না করে উল্টাে শহীদুল্লাহ কাজিকে মামলা না করতে হুমকি দেন এমন অভিযোগ তার।
তিনি আরও জানান, তার ছেলের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হওয়ায় শুক্রবার সকালে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করে। সে এখন বাংলাদেশ মেডিকেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে৷
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিকাশ জানান, আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও বিশ্লেষণ করে আসামিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিন আসামি আকলিমা মোশাররফ, নয়ন আগাম জামিনে রয়েছেন। বাকিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল আমিন জানান, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে শহীদুল্লা কাজের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাতে প্রধান আসামি আলমকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
সান নিউজ/আই/কেটি