শিপলু জামান, ঝিনাইদহ : ব্রিজ-সেতু আমরা স্বপ্ন দেখি, বাস্তবে নয়। জানি না এ স্বপ্ন বাস্তবে কোনদিন রূপ নিবে কী-না। কারণ এখানে বছরের ৬ মাস পানি থাকে এবং বাকি ৬ মাস বাঁশের সাকোতে পারাপার হতে হয়। অর্থাৎ বছরের কার্তিক মাসে তৈরি করা হয় বাঁশের সাকো। তাও আবার বর্ষা আসলেই নদীর পানির স্রোতে ভেসে যায়। বছরের পর বছর ধরে এরকম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শত শত মানুষকে।’
কথাগুলো বলছিলেন যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইবা খাতুন। সে তৈলকূপী গ্রামের সহিদুল ইসলামের কন্যা। সে প্রতিদিন ঐ ভাঙ্গাচোরা বাশেঁর সাঁকো দিয়ে পার হয়ে কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়া মসজিদের মোড়ে এসে ইজি বাইক, ভ্যান অথবা লাটা হাম্বারে চড়ে কালীগঞ্জ পৌছায় তারপর বাসে চেপে তাকে যশোর যেতে হয়।
সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ২ নং জামাল ইউনিয়নের তৈলকূপী গ্রামের তিন দিক দিয়ে বয়ে চলা বেগবতী নদীর কথা বলছিল। এ নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বর্ষার সময় তালের নৌকা (ডুঙ্গা) আর এখন একটি বাঁশের সাঁকো। তাও আবার বর্ষা আসলেই সাঁকো নদীর পানির স্রোতে ভেসে যাবে। ফলে বছরের ছয় মাস সাঁকো দিয়ে এবং বাকি ছয় মাস ডুঙ্গা দিয়ে এ নদী পারাপার হতে হয় তিন ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের শতশত মানুষকে। এতে চরমভোগান্তি আর দুর্ভোগে পোহাতে হয় ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের জামাল ও নিয়ামতপুর ইউনিয়নের এসব এলাকাবাসীদের প্রাণের দাবি তৈলকূপী দক্ষিণপাড়া ও বারোপাখিয়া গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেগবতী নদীর উপর একটি ব্রিজের প্রয়োজনের কথা। বলরামপুর, মহেশ্বরচাদা, নিয়ামতপুর, বারোপাখিয়া, কাশিমা, তৈলকূপী, নলডাঙ্গা, দূর্গাপুর ও খড়াশুনিসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শতশত মানুষের চলাচলের জন্য এ নদী ব্যবহার করতে হয়। যেখানে এ নদীর উপর নেই কোন ব্রিজ।
এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন বয়সের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরম দূর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হাজার হাজার মানুষ নদী পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। আবার এ সাঁকো নির্মাণের ছয়মাস যেতে না যেতেই তা নদীর পানির স্রোতে ভেঙ্গে যায়। ডুঙ্গায় পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে।
স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের বইপুস্তক নিয়ে নদীর পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীতে পড়ে গিয়েছে। ফলে তাদের বইখাতা ভিজে যাওয়ায় স্কুল ও মাদ্রাসায় যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
এদিকে, অনেকেই ক্ষোভ নিয়ে জানান, নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা এ নদীর উপর দিয়ে চলাচলরত মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয় একটি ব্রিজ নির্মাণের। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলে কেউ আর খবর রাখে না।
নদী পার হয়ে নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ঘোষনগর এলাকায় রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়। এসব স্কুলে রয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এলাকার শিক্ষার্থীরা জানায়, বেগবতী নদীর উপর বাঁশের এ সাঁকো দিয়ে তাদের প্রত্যেকদিন স্কুলে আসতে হয় এবং বাড়ি যেতে হয়। বাঁশের সাঁকো আবার বর্ষার দিন আসলেই ভেঙে যায়। ফলে সে সময় এ নদী পারাপারের একমাত্র বাহন হলো ডুঙ্গা।
এ নদীর উপর একটি ব্রিজের খুবই দরকার। ব্রিজ হলে সকলের মনের আশাপূরণ হবে। সকলেই নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দে এ নদীপার হতে পারবে। তা না হলে ব্রিজ-সেতু স্বপ্নের মতই রয়ে যাবে। তবে আমাদের দাবি একটি ব্রিজ। আমরা আর স্বপ্ন দেখতে চাই না। আমরা বাস্তবে এ নদীর উপর ব্রিজ দেখতে চাই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তারা অবশ্যই যেন বিষয়টি নজরে নিয়ে সকলের দুঃখ দূর করবেন।
এভাবেই বছরের পর বছর এ নদীর উপর একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের লোকজন। চোখে স্বপ্ন নিয়ে চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তির মধ্যে পারাপার হচ্ছে দুইপাড়ের শতশত মানুষ।
সান নিউজ/এসজে/এনকে