শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী: স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে অমর একটি দিন ২০ জানুয়ারি। এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের অগ্রনায়ক আমান উল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ। ৬৯-এর এই দিনে তৎকালীন স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হরতাল চলাকালে পাকিস্তানি পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে আসাদকে।
আজকের প্রজন্মসহ আগামী প্রজন্মের মাঝে আসাদ বিষয়ে জ্ঞ্যান লাভের জন্য তার সম্পর্কে পাঠ্য বইয়ে বিস্তারিত তুলে ধরাসহ দিবসটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে পূর্ণ মর্যাদা দানের দাবি জানিয়েছেন সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক আমান উল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ। ‘আসাদের মন্ত্র, জনগণতন্ত্র’। এই শ্লোগানকে ধারণ করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে অকুতোভয় এ অগ্রনায়ক রাজপথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশ থেকে স্বৈরশাসনের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল। অর্জিত হয়েছিল এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতন্ত্রের জন্য শহীদ আসাদের আত্মদান পরে ৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন করে গেছেন শহীদ আসাদ। ইতিহাসের সোপান অতিক্রম করে প্রতিবছর ফিরে আসে দিনটি। দিনটি উপলক্ষে নরসিংদীতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে।
পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির জানায়েদ আহমেদ ও আফরিন সুলতানা জানায়, ৬৯-গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক আমান উল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ শিবপুরের ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। আমরাও এই বীর সন্তানকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আমরা আসাদ সম্পর্কে বই পুস্তক থেকে তেমন জানিনি। শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু আগামী প্রজন্মসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যাতে আসাদ সম্পর্কে জানতে পারে সেই লক্ষ্যে আসাদের নামে একটি জাদুঘর, তার নামে একটি বৃত্তি চালুকরণ ও তার সম্পর্কে বিস্তারিত পাঠ্য বইয়ে তুলে ধরা হউক। পাশাপাশি দিবসটিকে মর্যাদাপূর্ণ করার লক্ষ্যে ২০ জানুয়ারিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
তাদের কথার সাথে একমত পোষণ করে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমীর হোসাইন গাজী বলেন, আসাদ আমাদের গর্ব। আসাদ আমাদের চেতনা। তাই তার বিষয়ে পাঠ্য বইয়ে আরো লেখা থাকা প্রয়োজন। কেননা এই আসাদকে নিয়ে যে লেখা আছে তা খুবই সামান্য। তাকে নিয়ে আরো বেশি লেখা থাকলে আজকের প্রজন্মরা আরো জানতে পারবে।
এ বিষয়ে আসাদকে নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন পার্শ্ববর্তী চরসিন্দুরে অবস্থিত সোমেন চন্দ পাঠাগারের সভাপতি শহিদুল হক সুমন। এই পাঠাগারের সভাপতি শহিদুল হক সুমন জানিয়েছেন, আসাদ যেই চিন্তা-চেতনা নিয়ে কৃষক শ্রমিকের জন্য আন্দোলন করেছেন, সেই চিন্তুা থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে আছি। আসাদের মূল্যায়নের অংশ হিসেবে সরকার আসাদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করায় ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে ঢাকায় একটি জাদুঘর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল কিন্তু এখন তা স্থগিত। তাই এই জাদুঘরটি সম্পন্ন করার দাবির পাশাপাশি পাঠ্য বইয়ে আসাদ সম্পর্কে সন্নিবেশিত করার অনুরোধ জানান।
নরসিংদী জেলা স্কুল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইন্ডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা জানিয়েছেন, আসাদ কৃষক শ্রমিকের মুক্তির লক্ষ্যে যে আন্দোলন করেছিলেন সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ফসল। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আসাদের বাস্তবায়িত হলে এই দেশ ও দেশের মানুষ আরো উন্নত হতে পারে।
শহীদ আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে। বাবার নাম আলহাজ মোহাম্মদ আবু তাহের। তিনি ১৯৬০ সালে মেট্রিক এবং ১৯৬৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ এমএ পাস করেন।
সান নিউজ/কেটি