নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট : সিলেট মহানগরীর লালদীঘির পাড়ের হকারদের দীর্ঘশ্বাস চলছেই। আগের মতো ব্যবসা নেই, কোনমতে বেঁচে আছি- এমনটাই তাদের প্রতিক্রিয়া। প্রায় সবধরণের ছোট ব্যবসায়ীর মন্তব্যই এরকম।
তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পোশাক ব্যবসায়ীদের। তাদের অবস্থা এমন যে, কোন কোনদিন বনি বা সাইত ও করতে পারছেন না। কিন্তু তবু প্রতিদিন দোকানের পসরা সাজান, আর আশায় আশায় দিন গুনছেন, যদি পরিস্থিতি পাল্টায়!
সিলেট মহানগরীর বন্দরবারজার- জিন্দাবাজার- চৌহাট্টা পর্যন্ত হকারমুক্ত করার দাবি অনেক পুরানো। এনিয়ে আদালতের নির্দেশনাও আছে। কিন্তু তবু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলোনা। একদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান যেমন চলত, তেমনি তিনি অভিযান শেষ করতে না করতেই আবার দেখা যেতো হকাররা যথাস্থানে বসে পড়েছেন।
কঠোর থেকে কঠোরতর পদক্ষেপেও কোন পরিবর্তন হতোনা। এমনকি, কঠোর হওয়ায় বছর দুয়েক আগে বিক্ষুব্ধ হকারদের হামলার মুখেও পড়তে হয়েছিল মেয়রকে। তখন হকারদের দাবি ছিল, পূণর্বাসন ছাড়া সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান অমানবিক। এটা তারা মানবেন না। সচেতন নাগরিকদের কেউকেউও এমন দাবির পক্ষে ছিলেন।
অবশেষে দীর্ঘ পরিকল্পনা আর প্রক্রিয়া পেরিয়ে লালদীঘিরপাড় হকার মার্কেটের শূণ্য হওয়া স্থানটিতে তাদের পূণর্বাসন কার্যকর হয়। প্রায় ১২শ ভাসমান ব্যবসায়ীর একটা স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ নগরবাসীও ফেলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
তবে হকারদের দীর্ঘশ্বাসের অবসান হয়নি। কারণ, আগের তুলনায় ব্যবসা একেবারেই কমে গেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ আছে তাদের। কিছুকিছু হকার লালদীঘিরপাড়ে জায়গা নিলেও বসছেন না। খালি ফেলে রেখে পুলিশের চোখ এড়িয়ে কখনো রাজপথে, কখনোবা পাড়ার সরুপথে আগের মতোই ছুটছেন ছোটোখাটো ঠেলাগাড়িতে পসরা সাজিয়ে। এদের মধ্যে অবশ্য ফলওয়ালার সংখ্যাই বেশি।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের মিলন মিয়া (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রাজপথে ফলের ব্যবসা করেছেন। ৭ জনের একটা বড় সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে। লালদীঘিরপাড়ে জায়গা নিয়ে কয়েকদিন বসেছিলেন তিনি। এরপর আবার রাস্তায়। পুলিশের তাড়া সহ্য করেও দৌড়াচ্ছেন ছোট ঠেলাগাড়িতে কমলা কেনু মাল্টা বা আপেল নিয়ে। বললেন, ওহানে ব্যবসা নাই। তাই দৌড়াই। দৌড়ানির মধ্যেই আছি।
প্রতিদিন ফল, সবজি, মাছ, কাপড়, জুতা, কসমেটিক্স, চা-পান ও সিগারেটের পসরা সাজিয়ে বসছেন অনেক নিরুপায় হকার। তাদের মধ্যে কাপড়-জুতা ও কসমেটিক্সওয়ালাদের অবস্থা খুব খারাপ। তাদের কেউ কেউতো সারাদিন বসে থেকে শূণ্য হাতেই ফিরছেন ঘরে। জমানো টাকায় টান পড়েছে অনেকের। কেউ কেউ ‘দেশো ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর কেউকেউ এক আধবেলা খেয়ে পরে কোনমতে দিনবদলের অপেক্ষায়।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আলাল মিয়া (৪৮) তেমনই একজন। ২০/২২ বছর ধরে এই শহরের ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করে চলছে তার ৮/৯ জনের সংসার। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানালেন, কোন কোনদিন তার ‘বনিও হয়না। জমানো টাকা অনেক আগেই শেষ। এখন বাড়িতে টাকা দিবেন কি, নিজেই এক আধবেলা খেয়েপরে দিনবদলের আশায় আছেন।
দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করতে করতে জানালেন, হবিগঞ্জে ফিরে মোটামুটিভাবে বেঁচে থাকার তেমন কোন উপায় নেই তার। কিন্তু তবু, এভাবে আর কতদিন! কথায় কথায় তিনি আরও জানালেন, লালদীঘিরপাড়ে অন্যান্যদের ব্যবসা মোটামুটি হলেও তারমতো কাপড়ওয়ালাদের মহাদুর্দিন চলছে। প্রতিদিনই তাদের দীর্ঘশ্বাস কাঁপাচ্ছে আকাশ-বাতাস।
তবে মিলন ও আলাল স্বীকার করেছেন, সামনের সারিতে যাদের জায়গা হয়েছে তারা মোটামুটি খেয়ে পরে বাঁচতে পারছেন। কিন্তু ভেতরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। বিষয়টা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন- এমন প্রত্যাশা তাদের মতো আরও অনেকের।
সান নিউজ/একে