নিজস্ব প্রতিনিধি, নাটোর : প্রাক প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের ১৮.২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরেপড়ে। এখনও ২ ভাগ শিশু স্কুলে ভর্তি হয় না। সে হিসেবে দেশের ৩০ লাখ শিশু এখনও শিক্ষার বাইরে। তাদের শিক্ষার আওতায় আনতে সারা দেশের ৩৪৫টি উপজেলায় ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যার মধ্যে নাটোর জেলার ৫টি উপজেলা এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সরকারের এই কর্মসূচি সফল করতে নাটোরে ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’ প্রোগ্রাম বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) দিনভর নাটোর জেলা প্রশসকের সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এই কর্মশালা আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ পিএএ বলেন, সরকার মানুষকে শিক্ষিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেউ শিক্ষা বঞ্চিত হলে তিনি নিজে কিংবা তার পরিবারই শুধু নয়, সমাজ এবং রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষাবিহীন মানুষ দৃষ্টিহীনের মতো। তাই প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরেপড়া এবং এখনও স্কুলে ভর্তি না হওয়া শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে সরকার ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমান সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নে এই প্রকল্প সফল করতে সংশ্লিস্ট সকলের প্রতি আহবান জানান জেলা প্রশাসক।
এতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক/শিক্ষা) নাদিম সারওয়ারের সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন, নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. সাজেদুর রহমান খাঁন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, প্রকল্পের প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল কাউম প্রমুখ।
সভার শুরুতে এই কর্মশালার মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সহযোগী স্ংস্থা আলোর নির্বাহী পরিচালক শামিমা লাইজু নীলা। নাটোর জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহ-পরিচালক মোহা. জালালুম বাঈদ এর সঞ্চালনায় এতে মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন, দিঘাপতিয়া এম, কে, কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষাবিদ সুবির কুমার মৈত্র (অলক) নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিন, আইনজীবী ও সংস্কৃতি ব্যক্তি খগেন রায়, সাংবাদিক সুফি সান্ট প্রমুখ।
এতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সাংবাদিক, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংগঠক এবং নগরীর বিশিস্ট ব্যক্তিবর্গ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
নাটোরে প্রকল্প বাস্তবায়কারী সংস্থা পিকেএসএফ এর নির্বাহী পরিচালক ডেইজি আহম্মেদ জানান, নাটোরে ৫টি উপজেলার মধ্যে রয়েছে লালপুর-বাগাতিপাড়া, নাটোর সদর- নলডাঙ্গা এবং গুরুদাসপুর। প্রতিটি উপজেলার ৭০টি শিখন কেন্দ্র হবে। এসব কেন্দ্রতে ৩০ জন করে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, একজন শিক্ষক, উপজেলায় ৫ জন করে সুপার ফাইজার এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একজন প্রোগ্রাম ম্যানেজার দায়িত্ব পালন করবেন। এসব শিক্ষাথীরা প্রতি মাসে উপবৃত্তি পাবেন ১২০-৩০০ টাকা করে।
একটি শ্রণিকক্ষে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা (এসএসসি) সম্পন্ন একজন শিক্ষক কর্তৃক এনসিটিবি’র কারিকুলাম ও টেক্সট বই অনুসরণ করে পাঠদান করা হয়।
সূত্র মতে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’র (পিইডিপি-৪) আওতায় ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’-এর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে (৮-১৪ বছর বয়সী) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতির প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান এবং তাদেরকে শিক্ষার মূলধারায় সংযুক্ত করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। লক্ষামাত্রা অনুযায়ী ১০ লাখ শিশুর মধ্যে এক লাখ শিশু এর আগে শেষ হওয়া পিইডিপি-৩ এর অধীনে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত কর্মসূচির অন্তর্ভিক্ত ছিল।
সান নিউজ/এসএস/কেটি