রেজাউল করিম. সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর নির্বাচনের আর মাত্র ২ দিন বাকি। ভোট সামনে রেখে শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সাবেক মন্ত্রী, বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী বর্তমান মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস এবারও ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী! এদিকে তার বিপরীতে শক্তিশালী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রয়েছেন সাজ্জাদুল হক রেজা প্রতিক (নারকেল গাছ)।
তিনি আশানুর বিশ্বাসের পুতুরা (মেয়ের দেবর) ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। রেজার বড় ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল বেলকুচি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।
এদিকে রিট করে উচ্চ আদালতের রায়ে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতা হাজী আলতাব হোসেন প্রামানিক।
বেলকুচিতে জামায়াত-বিএনপির ভোটের আধিক্য থাকলেও তাতে নির্বাচনী এলাকায় তেমন কিছু চোখেই পড়ছে না ধানের শীষ প্রার্থীর পোস্টার ব্যানার। অলি-গলিতে অল্পসংখ্যক পোস্টার থাকলেও নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ করছে না। এছাড়া বর্তমান ধানের শীষের প্রার্থী সমন্বয় না করে এককভাবে নির্বাচন করছে। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীই জয়ী হবে বলে দাবি তাদের।
গত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী বেগম আশানূর বিশ্বাস। এবারও দলের হাইকমান্ড তার ওপর আস্থা রেখেছে। দ্বিতীয় মেয়াদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠ জমিয়ে রেখেছেন তিনি।
জানতে চাইলে বেগম আশানুর বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রথম মেয়াদে আমি পৌরসভার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। 'খ' শ্রেণির পৌরসভাকে 'ক' শ্রেণিতে উন্নিতকরণসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি পৌরসভায় লাইটিং ব্যবস্থারও উন্নয়ন করেছি।
তাই আমি আশাবাদী পৌরবাসী দ্বিতীয় মেয়াদে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
এদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজার জনসমর্থন চোখে পরার মত। সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী আশানুর বিশ্বাসের বড় মেয়ে সোমা বিশ্বাস নিজের মা-বাবাকে বাদ দিয়ে দেবর রেজার (নারকেল গাছ প্রতিক) জয়ের জন্য প্রচারে নেমেছেন। দেবরের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে নিজের বাবা-মার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতেও পিছপা হচ্ছেন না তিনি।
এতে রেজার নির্বাচনী প্রচারনা ও সমর্থন বেড়েই চলছে। তার স্বামী সাজেদুল নিজেও স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার বিপক্ষে গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
এছাড়া সাজ্জাদুল হক রেজা ইতিপূর্বে করোনা, বন্যা ও বিভিন্ন দূর্ভোগে অসহায় সহ সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে সব সময়। এ কারণেই দলের কিছু নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ তার নির্বাচনে এগিয়ে এসেছে।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, সাধারণ জনগনের ভালবাসায় আমি নির্বাচন করছি। গত উপজেলা নির্বাচনে দলের তৃণমূল ভোটে আমি জয় পেয়েছিলাম। এ পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থীর চেয়ে আমাকে বেশি ভোট দিয়েছিলেন। দল আমাকে নৌকা দেয়নি, যে সমস্ত নেতাকর্মী আমাকে ভোট দিয়েছে তাদের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। আশাকরি সাধারণ জনগণের ভালবাসায় আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো।
আগামী ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে বেলকুচি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মোট ২৬টি ভোটকেন্দ্রের ১৭৩টি কক্ষে চলবে ভোট গ্রহণ। এতে ভোট প্রদান করবেন মোট ৫৩ হাজার ৩৬ জন ভোটার। এরমধ্যে নারী ভোটার ২৬ হাজার ৪৮ এবং পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৩১৮ জন। এবারে সবকটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ চলবে।
সান নিউজ/আরকে/এনকে