নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি)। খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্ভীক সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহার ২০০৪ সালের এই দিনে চরমপন্থীরা বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করে। এ হত্যা মামলায় ২০১৬ সালে খুলনার দ্রুত বিচার আদালত ৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্ভীক সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করবে। ক্লাবের পক্ষ থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ সাংবাদিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং ১০ টা ৪৫ মিনিটে ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
একইভাবে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নও (কেইউজে) নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া মানিক সাহার পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সিপিবিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করবে।
২০০৪ সালের ১৪ জানুয়ারি খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মহানগর ও জেলা কমিটির সম্মেলন থেকে প্রেসক্লাবে যান। প্রেসক্লাব থেকে কাজ শেষ করে তিনি রিক্সা যোগে আহসান আহমেদ রোডের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় প্রেসক্লাবের অদূরে চরমপন্থীদের বোমা হামলায় তিনি নিহত হন।
এ মামলায় ১১ আসামী মধ্যে ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, দশ হজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের দন্ড দেয়া হয়। হত্যা মামলায় এসব আসামীদের সাজা দেয়া হলেও বিষ্ফোরক মামলায় কোন আসামীকে সাজা দেয়া যায়নি। হত্যা মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয় অতি দ্রুততার সাথে ২০০৪ সালের ২০ জুন।
এ সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক কাজী আতাউর রহমান এবং খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন। এ মামলায় আসামী ছিলেন ১৩ জন। একই আসামীদের অভিযুক্ত করে বিষ্ফোরক মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয় বেশ পরে ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
পরে হত্যা মামলাটির অধিকতর তদন্ত হয়। এই অধিকতর তদন্তে সম্পূরক চার্জশীট জমা পড়ে ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল। তিনি আরও একজন আসামী যোগ করেন। মোট আসামী হয় ১৪ জন। বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই আসামীদের মধ্যে তিনজন কথিত ক্রসফায়ারে মারা পড়ে। ১১ আসামী নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
দুর্বল তদন্ত আর যথাযথ সাক্ষ্য না পাওয়ায় অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ রব হাওলাদার।
মানিক সাহার ছোট ভাই প্রদীপ সাহা বলেন, ২০১৬ সালে হত্যা মামলায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে খুলনার দ্রুত বিচারিক আদালত। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাদের সাজা হয়নি। পারিবারিকভাবে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে।
এছাড়া খুলনা প্রেসক্লাবের শহীদ সাংবাদিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হন সাংবাদিক মানিক সাহা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ইটিভি প্রতিনিধি ও বিবিসি বাংলা’র খন্ডকালীন সংবাদদাতা ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত মানিক সাহা ছাত্রজীবন থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন।
সান নিউজ/কেএ/এনকে