নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : করোনার কারণে এ বছর দেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলোর ন্যায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে লটারিতে এক বালিকাকে বিজয়ী করা হয়েছে। এতে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হওয়ায় একদিকে যেমন অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে বালক বিদ্যালয়ে বালিকা নির্বাচিত হওয়ায় হাস্যকর ঠেকেছে লটারি প্রক্রিয়া।
সোমবার সারাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির অনলাইনে লটারি আযোজন করা হয়।ওইদিন সন্ধ্যায় প্রকাশ করা হয় লটারির ফলাফল। মজার ব্যাপার হলো, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভর্তির ‘সুযোগ’ পেয়েছে এক মেয়ে শিক্ষার্থী। এছাড়াও একই শিক্ষার্থীকে একাধিকবার বিজয়ী করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে লটারিতে বিজয়ী ভাগ্যবান ওই মেয়ে শিক্ষার্থী ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাও গ্রামের হায়দার আলীর মেয়ে ওয়াসিমা আক্তার লুবনা। ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ডে শিফটের ভর্তি তালিকায় তার নাম এসেছে। এছাড়াও বোরহানুজ্জামান নামে একজন শিক্ষার্থীকে ২ বার বিজয়ী দেখানো হয়েছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ রসিকতা করতেও ছাড়ছেন না।
এ বিষয়ে আহম্মদ রাজু নামে একজন তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লটারি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ভাগ্য বিড়ম্বনা দিয়ে হতাশা তৈরি হতে পারে। তাই তিনি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শহরের আরো কয়েকটি স্কুলের নাম তুলে ধরেছেন। সেসব স্কুলেও ভাল লেখাপড়া হয় উল্লেখ্য করে সেসব স্কুলে পড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল ও কলেজের মেধাবী ও জনপ্রিয় শিক্ষকদের আনার অনুরোধ জানান।
উৎপল মুজিব লটারি প্রক্রিয়ার কারণে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলেও এবার লটারি খেলায় পরাজিত এক সৈনিক। যদি লিখিত পরীক্ষা হতো তাহলে আমার ছেলে নিঃসন্দেহে উত্তীর্ণ হতো সফলতার সাথে। তাকে সেই ভাবে গড়ে তুলেছিলাম ৫ বছর ধরে।আজ অযোগ্য যারা তাদের নাম লটারির মাধ্যমে উঠেছে। এখানে মেধার কোন মূল্য নাই।আমার ছেলের মেধা থাকা সত্ত্বেও ভাল কোন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেল না।
সীমা আকতার নামে একজন লিখেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লটারি এমন তো হবেই। ৫ বার পরীক্ষা দিয়েও না হয়ে এবার ৬ষ্ঠ বারের মতো ৩য় শ্রেণীতে চান্স পেয়েছে। আজব লটারি।
আমজাদ নামে এক সমাজ সেবক লিখেছে, 'যে মেয়েটি বালক বিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে তার ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে ছেলেদের সঙ্গে পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
মেয়েটির বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক হায়দার আলী জানান, আবেদন প্রক্রিয়ায় আমার কোন ভুল ছিল না। আমার মেয়েকে ঠাকুরগাঁও বালিকা বিদ্যালয়ে মেয়েদের সাথে পড়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। কিন্তু এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিজুস কান্ত রায় বলেন, ওই মেয়ে শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।
কিভাবে বালক বিদ্যালয়ে একজন মেয়ে ভর্তির লটারিতে বিজয়ী হল প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিভাবকের ভুলের কারণে এমনটা হতে পারে। কারণ ভর্তির ফরমে ৫টি বিদ্যালয়ের নাম থাকে। ওই পাঁচটি বিদ্যালয়ের যে কোনো বিদ্যালয় অভিভাবকরা সিলেক্ট করেন। এখানে হয়ত ভুলে তারা ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম সিলেক্ট করেছিল। যে কারণে লটারিতে বালক বিদ্যালয়ে সে ভর্তির লটারিতে বিজয়ী হয়েছে।
বর্তমানে ঠাকুরগাঁও শহরের বেশিরভাগ অভিভাবকের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন যেখানে করোনাতেও হাট বাজার সর্বত্র মানুষের ভিড় সেখানে পরীক্ষা নিলে এমন কোন ক্ষতি হতো না। তাতে প্রকৃত মেধাবীরা উত্তীর্ণ হতো।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার আল আজাদকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সান নিউজ/বিআই/কেটি