মাসুম লুমেন, গাইবান্ধা : নির্যাতনের তিন বছর পর এক শালিসিতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে মায়ের পাঁয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পরে। ডুকরে কেঁদে ওঠেন বৃদ্ধা মা। চিৎকার করে একমাত্র সন্তান বলতে থাকে 'ক্ষমা করে দাও মা' 'ক্ষমা করে দাও' কিন্তু আঘাতে আঘাতে জর্জরিত মা তখনও নিজের অভিমানে অনড়। কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা, ক্ষমা না করে দিলে পা ছাড়বেই না। উপস্থিত শত শত গ্রামবাসী, আত্মীয়-স্বজন সবাই তখন বৃদ্ধ মাকে ক্ষমা করতে জোর অনুরোধ করার এক পর্যায়ে ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বুকে টেনে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেন। তবে বৃদ্ধা মা এসময় এক শর্ত জুড়ে দেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তিনি ক্ষমা করে দিতে রাজি। আবেগঘন ভালবাসার পরিবেশ তৈরি হয়, যে আবেগে কেঁদে ফেলেন সেখানে উপস্থিত বিচারক থেকে উপস্থিত গ্রামবাসী।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ৭১ টিভির জেলা প্রতিনিধি শামিম আল সাম্য, সাংবাদিক ও সদর উপজেলা মানবাধিকার কমিশন এর সাধারণ সম্পাদক ফারহান শেখ, এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার এবং দৈনিক জাগরণ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মাসুম লুমেন, জেলা পরিষদের সদস্য মাজেদা বেগম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার সেই বৃদ্ধা মায়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে ঘরে তুলে নিয়েছেন তিন সন্তান। আর কোনো দিন মায়ের সাথে অন্যায় আচরণ করবে না মর্মে লিখিত দিয়েছেন।
এছাড়া বৈঠকে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তিন সন্তান নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিচ্ছিন্নভাবে থাকা দুই বোন, অসুস্থ বাবা, ছেলে আমিনুল এবং মা আমেনা বেওয়া একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেন। এসময় উপস্থিত গ্রামবাসী নারীপুরুষ সবার চোখে আনন্দ অশ্রু ঝরছিল। শেষে মাফ চেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন বাবার চিকিৎসা মাকে নিজের কাছে রেখে ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ারও আকুল আবেদন জানান বৃদ্ধার সরকারি কর্মকর্তা ছেলে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালে। ঘর-বাড়ি, জমি, অর্থ- সব কেড়ে নিয়ে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল নিজের ঔরসজাত একমাত্র সন্তান। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ তিন বছর। এ সময়টায় মা আমেনা বেওয়া কখনো মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি, কখনো অন্যের বাড়িতে থেকেছেন। বেশিরভাগ সময় অর্ধাহার অনাহারে রাত কেটেছে অন্যের গোয়াল ঘরে। স্বামী শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার সুযোগে বসতভিটা ও জমিও নিজের নামে লিখে নেন ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে। এরপর এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে এ ঘটনায় গত বছরের ডিসেম্বরে গাইবান্ধা সদর মানবাধিকার কমিশন, সুন্দরগঞ্জ ইউএনও ও সাংবাদিকদের বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বৃদ্ধা মা আমেনা বেওয়া।
এ বিষয়ে আমেনা বেওয়া সান নিউজকে বলেন, আমার ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হলে আমার ছেলে এবং ছেলের বউ আমাকে মারপিট করে বের করে দিয়েছিল। সবার সহযোগিতায় একমাত্র সন্তান তার ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমিও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আজ আমি স্বামী, সন্তান কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি।
সান নিউজ/কেটি