শামীম রেজা, মানিকগঞ্জ : ‘মৌমাছি, মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি, একবার দাঁড়াও না ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই কবিতার মৌমাছির মতোই এখন ব্যস্ত মানিকগঞ্জে মধু সংগ্রহকারীরা। তারা মৌমাছি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সরষে খেতে। এ জেলার সরিষা খেতে মৌমাছির খামার করে সহজেই মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে সরিষা ক্ষেতে মধুর খামারে দেখা গেছে, সরিষা খেতের পাশেই সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। হাজার হাজার মৌমাছি হলুদ রঙের সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করছে। ৭/৮ দিন পর পর ওই সব বাক্স থেকে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি বাক্সে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৌমাছি আর একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে। রানী মৌমাছি ডিম দেয়। মৌমাছির নাম ‘এফিস মিলি ফেরা’ জাতের মাছি। সারাদিন মাছিগুলো সরিষার ফুলে পরাগায়ণ ঘটায় এবং মধু সংগ্রহ করে। এতে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরের সরিষা খেত থেকে মধু সংগ্রহ করে মাছিগুলো। প্রতি বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ লিটার মধু পাওয়া যায়।
এদিকে, বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৌচাষিরা। সাতক্ষীরা, জামালপুর, গাজীপুর, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক মৌচাষির দল মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই মধু রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করা হয়। বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ চলে। এ সময়ে গড়ে একেকজন মৌচাষি প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ মণ মধু আহরণ করতে পারেন। চলতি বছর জেলার বিভিন্ন স্থানে মৌচাষিরা সরিষা ফুল থেকে প্রায় ৩৫ টন মধু সংগ্রহ করবেন, যার পাইকারি মূল্য ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌচাষি সাইফুল ইসলাম সান নিউজকে জানান, চার বছর আগে তিনি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০টি বাক্স নিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাক্সের সংখ্যা শতাধিক। সরিষা ফুল থেকে তিনি মাসে ২০-২৫ মণ মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি এই মধু ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় পাইকারি বিক্রি করেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে বসেছেন জামালপুর জেলার মোহাম্মদ রাজন ও শফিকুল ইসলাম। তাদের বাক্সের সংখ্যা এক শ’র কাছাকাছি। প্রতি মণ মধু ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও আশুলিয়ার এক পাইকারের কাছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জে এবার ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ হাজার টন। সরকার বারি ১৪ জাতের বীজ সরবরাহ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় ৩৫ টন মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মৌচাষিরা আসায় ফলন প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করে থাকে।
সান নিউজ/কেটি