সান নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে কোন কোন হাসপাতাল। অলস বসে আছেন হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রোগী শূন্য হয়ে গেছে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল। মাঝে মধ্যে দুই-একজন শিশু রোগী দেখা যায় হাসপাতালে। ফাঁকা পরে আছে হাসপাতালের বেডগুলো। কোন রোগী না থাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে হাসপাতাল।
শুধু নেত্রকোনা নয়, বিভিন্ন জেলার অধিকাংশ হাসপাতালে কমে গেছে নিয়মিত রোগীর সংখ্যা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, করোনা আতঙ্কের কারণে অধিকাংশ মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। খুব বেশি প্রয়োজন হলে হাসপাতালে আসছে রোগীরা।
গতকাল (২৬ মার্চ) থেকে কোন রোগী নেই খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সার্জারি ওয়ার্ডে করোনার লক্ষণ থাকা একজনের মৃত্যুর পর আতঙ্কে অন্য রোগীরা হাসপাতাল ছেড়েছেন।
এছাড়া ওই রোগীর মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিকে করোনা ইউনিট ঘোষণা দিয়ে নতুন করে কোন রোগী ভর্তিও করছে না কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক সময়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় দেড় হাজার রোগী ভর্তি থাকে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও একই অবস্থা। করোনা আতঙ্কে রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। যারা ভর্তি ছিল তারাও বাড়িতে চলে গেছে। ফলে অলস বসে না থেকে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।
করোনা আতঙ্কে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন রোগীরা। হাসপাতালে মাঝে মধ্যে দুই-একজন শিশু রোগী দেখা যায়।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে নোয়াখালীর জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে সাতশ রোগী চিকিৎসাধীন থাকত। এখন সেখানে রোগীর সংখ্যা অর্ধেকেরও নীচে নেমে এসেছে। প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। রোগী নেই বললেই চলে।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতালে থাকতে অনীহা প্রকাশ করছেন। অনেকে সুস্থ না হয়েও চিকিৎসকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেই রোগীদের ভিড়। হাতেগোনা যে কয়েকজন রোগী আছেন তারা অতি দুস্থ পরিবারের। যাদের ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই কেবল তারাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সামর্থ্যবানরা পারিবারিকভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন নিজ বাড়িতে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো: তাহাজ্জেল হোসেন জানান, করোনা আতঙ্কের কারণে সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এখানে কেবল করোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে, এমন কথা ছড়িয়ে পড়েছে। তাই আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন না।
রোগ মুক্তির জন্য মানুষ যেখানে হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়, এখন রোগ থেকে বাঁচতে সেই হাসপাতাল ছাড়ছেন রোগীরা। করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে জীবনের গতি।