এম.কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি : সরকারি ছুটির অবকাশে নতুন বছরে রাঙামাটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বিপুল পর্যটকের আগমণ ঘটছে। শুক্রবার রাঙামাটি সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্স, ঝুলন্ত সেতু, জেলা প্রশাসকের শিশু পার্ক, জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্কসহ আশেপাশের পর্যটন স্পট ও দর্শনীয় স্থানে নামে অসংখ্য পর্যটকের ঢল।
পর্যটকদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে রাঙামাটির পরিবেশ ও প্রকৃতি। মুখর হয়ে উঠছে আশেপাশের জনপদ। সবুজ পাহাড় ও হ্রদ পরিবেষ্টিত রাঙামাটির নৈসর্গিক হাতছানিতে করোনার মধ্যেও সমাগম ঘটছে অগণিত পর্যটকের। সরকারি ছুটির দিনগুলিতে পর্যটন স্পটগুলোতে নামছে পর্যটকের ঢল। তবে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। এতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় স্থানীয়রা।
রাঙামাটি সরকারি পর্যটন স্পটের মনোরম ঝুলন্ত সেতুসহ আশেপাশে একাধিক স্পট গিয়ে দেখা যায়, ভ্রমণকারী বেশিরভাগ পর্যটক সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বেশিরভাগ লোকজন ঘুরছেন মাস্ক ছাড়াই ঠাসাঠাসি, দলাদলি করে।
শুক্রবার দেখা যায়, রাঙামাটি মনোরম ঝুলন্ত সেতু এলাকা পর্যটকে ঠাসা। অগণিত পর্যটকের পদচারণায় মুখর গোটা পর্যটন এলাকা। সেতুর ওপাড়ে বসানো হয়েছে বিভিন্ন জিনিসের বেচাবিক্রির পসরা। আশেপাশে অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। এসব পর্যটকের আগমণ ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে।
সরকারি পর্যটন স্পট ছাড়াও জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্ক, শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্পট, দর্শনীয় স্থানসহ কাপ্তাই হ্রদে নৌ-ভ্রমণ এবং সুবলং ঝরনা পর্যন্ত ভিড় জমছে প্রচুর পর্যটকের। সরকারি পর্যটন মোটেল ছাড়াও শহরের প্রায় আবাসিক হোটেল পর্যটকে ঠাসা। শতভাগ বুকিং প্রায় আবাসিক হোটেল মোটেলর কক্ষ।
রাঙামাটি সরকারি পর্যটন মোটেল অ্যান্ড হলিডে কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতুর প্রবেশ দ্বারে টিকিট কাউন্টারে কর্তব্যরতরা জানান, সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকের আগমণ বাড়ছে। তা ছাড়া বর্তমানে পর্যটনের ভর মৌসুম। ঝুলন্ত সেতুতে প্রবেশে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক টিকিট বিক্রি হয়েছে। টিকিটের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। আবাসিক মোটেলেও শতভাগ কক্ষ বুকিং।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, করোনার বন্ধকালীন আমাদের কষ্ট হয়েছে। অনেককে ছুটিতে পাঠাতে হয়েছে। এরপরও আমরা পর্যটনটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে ঠিক রেখেছি। বর্তমানে পরিবেশ স্বাভাবিক হচ্ছে। তাই সরকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার পর মৌসুম শুরু থেকেই রাঙামাটিতে যথেষ্ট পর্যটকের আগমন ঘটছে। বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের আগমন বাড়ছে। রাজস্ব আয় মোটামুটি ভালো। গত মাসে এ পর্যটন স্পটে ৫ লাখ টাকার অধিক রাজস্ব আয় হয়েছে। মোটেলে শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। এখন পর্যটকের আগমণে এখানকার পর্যটনশিল্পে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে মুখর হয়ে উঠছে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
সরকারি নির্দেশনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে স্পটে প্রবেশে টিকিট দিচ্ছি না। ভেতরে গিয়ে যদি কেউ মাস্ক খুলে ফেলে, তাতে আমাদের করার কিছুই নেই। ভেতরে উন্মুক্ত। তা ছাড়া আমাদের জনবল কম।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানান, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটকরা ভ্রমণ করছে। পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের সচেতন করতে প্রশাসনের লোকজন নিয়মিত কাজ করছে। পর্যটকসহ স্থানীয়দের মাক্স পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ মাক্স ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবে না।
রাঙামাটির নবাগত পুলিশ সুপার মীর মো. মোদদাছ্ছের হোসেন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় শহরের বিভিন্ন স্পটগুলোতে টুরিস পুলিশ ও নৌপুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তা নিতে কোতোয়ালি থানার মোবাইল টিম কাজ করছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরেই রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেন জেলা প্রশাসক। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জেলার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটে যারা ঘুরতে যাবেন, তাদেরকে অবশ্যই সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সংশ্লিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো স্পটে যদি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে, তা যাচাই সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/কেটি