শামীম রেজা, মানিকগঞ্জ : স্কুল আছে, আছে শিক্ষার্থীও। কিন্তু নেই কোনো শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীদের হৈ-হুল্লোড় থামাতে সকালে পাঠদান করেন মসজিদের একজন ইমাম। অন্য স্কুল থেকে এক শিক্ষককে সংযুক্ত করা হলেও তিনি নিয়মিত আসেন না। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া চরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। শিক্ষকহীন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
যমুনা নদীর দুর্গম চর শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া। এই চরের ৯ নং ওয়ার্ডে একমাত্র স্কুল আফতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী তিন শতাধিক। কিন্তু কোনো নিজস্ব শিক্ষক নেই। একজন সংযুক্তি শিক্ষক থাকলেও তিনিও অনিয়মিত।
সরেজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করছে। অনেকেই ক্লাস রুমে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। স্কুল লাগোয়া মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আব্দুল মান্নান সবাইকে ডেকে ক্লাসে পাঠালেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান শুরু করেন। একটি ছাড়া সবগুলো শ্রেণি কক্ষে কোনো বেঞ্চ নেই। মেঝেতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ।
হাফেজ মো. আব্দুল মান্নান জানান, সকালে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে এসে হৈ-হুল্লোড় করে। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি থামাতেই তিনি পাঠদান করেন। নিজের যতটুকু সাধ্য ততটুকুই পড়ান তিনি। এক শিক্ষক মাঝে মধ্যে আসেন। শিক্ষক না থাকায় স্কুলে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ছাত্র-ছাত্রীরা যখন ইচ্ছা আসে আবার যখন ইচ্ছা চলে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর রহমান জানান, শুনেছি এই স্কুলে একজন শিক্ষক। কিন্তু তিনিও ঠিকমতো আসেন না। ফলে এলাকাবাসীর অনুরোধে মসজিদের ইমাম ক্লাস নেন। শিক্ষক না থাকায় তাদের এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
অভিভাবক মিয়া ফকির জানান, তার ছেলে আফতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু লেখাপড়া না হওয়ায় স্কুলে যেতে চায় না সে। বাড়িতেও পড়ে না। তাই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মঞ্জু মিয়া জানান, স্কুলটি আগে কানাইদিয়া চরে ছিল। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিন বছর আগে আলোকদিয়া চরে স্থানান্তর করা হয়। চরের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাবে বলে বেশ খুশি হয়েছিল চরবাসী। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার সুযোগ থেকে চরবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষা অফিসে বিষয়টি বার বার জানিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। স্কুলের বিষয়ে তারা কোনো খোঁজখবরও নেন না।
এদিকে, সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে একমাত্র শিক্ষক আব্দুস সালাম দুপুরে স্কুলে পৌঁছান। তিনি দাবি করেন, স্কুলে নিয়মিত আসেন তিনি। তবে মিটিং থাকলে মাঝে মধ্যে আসেন না। এই প্রতিবেদক তার হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি খাতা না দেখিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
শিবালয় উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান সান নিউজকে জানান, আফতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারের ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৫ সালে স্কুলে পাঁচটি পদ সৃষ্ট হয়। ২০১৮ সালে সেখানে তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা চাকরিতে যোগদান করেননি। এরপর থেকেই স্কুলটি শিক্ষকশূন্য রয়েছে। তবে পাঠদান চালিয়ে যেতে অন্য স্কুল থেকে আব্দুস সালাম নামে এক শিক্ষককে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্কুলে তিনি নিয়মিত হওয়ার কথা, যদি না হন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/কেটি/এস