রাহাত হোসাইন, মাদারীপুর : ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার সেতুবন্ধন ঘটেছে। পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসায় আনন্দিত ও উচ্ছাসিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের সাথে মাদারীপুর জেলার মানুষ।
১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবসে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসায় হওয়ায় আরেকটি বিজয় বলে মনে করেন মাদারীপুরের মানুষ। পদ্মা সেতু শেষ হলে আর্থ-সামাজিক, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ও উন্নতি সাধিত হবে মনে করছেন এ অঞ্চলের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত বাকি কাজ সম্পন্ন করার দাবি মাদারীপুরের মানুষের।
পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান। স্বপ্ন এখন হাতের মুঠে। পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই পরিবর্তন হতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজ।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সেতুর সঙ্গে চালু হয়েছে ৬ লেনও। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিই নয়, নদীর দুই পাশে গড়ে উঠবে বিভিন্ন রকম কল-কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এমন স্বপ্ন বাস্তবে দেখার আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষক, যুবক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, কর্মজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
জানা যায়, এপারে পদ্মা সেতুর সঙ্গে ১৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক চালু হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ছয় লেন চালু রয়েছে। সেতুকে ঘিরে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী, শেখ হাসিনা হেলথ টেকনোলজি, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং শেখ রাসেল আইটি পার্কসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
সড়ক পথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে ঢাকার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম মাদারীপুরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌ রুট। যুগের পর যুগ শীতের বেলায় ঘন কুয়াশা, বর্ষায় তীব্র স্রোত এবং গ্রীষ্মে নাব্য সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে আটকে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রাপথের সবাইকে। পদ্মা সেতু হলে নৌ রুট ব্যবহারকারী সকল শ্রেণী পেশার মানুষের যেমন ভোগান্তির অবসান হবে, তেমনটি অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা যারা বেকার যুবক আছি তারা কাজ করার সুযোগ পাব। আশা করি কোন না কোন চাকরি হয়ে যাবে।
কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আমরা শিবচরে কৃষিপণ্য উৎপন্ন করে খুব অল্প সময়ে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে বেশি লাভবান হবো।
মাদারীপুরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পদ্মা সেতু সম্পন্ন হলে আমরা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবো এবং আরো বেশি উন্নতমানের সামগ্রী দ্রুততার সাথে মাদারীপুরবাসীকে প্রদান করতে পারবো।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন, পদ্মা সেতুর ফলে জেলার সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে। জেলার জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলারও উন্নীত হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান মাদারীপুর মুক্ত দিবস ১০ ডিসেম্বরে বসায় এটা মাদারীপুরবাসীর জন্য আরেকটি বিজয়। পদ্মা সেতুর এই মাইলফলকে আমি অংশীদার হতে পেরে আমি আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু একটি মেগা প্রকল্প। সেতুটির কাজ সমাপ্ত হলে কৃষক তার পণ্য ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারবে। এখানে বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক হবে, ভাল ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে, পর্যটন কেন্দ্র হবে, অনেক পর্যটকরা দেখতে আসবে, এক কথায় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। আমি মনে করি পদ্মাসেতু হওয়ায় মাদারীপুর জেলা দ্রুত একটি উন্নত জেলায় পরিণত হবে।
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে আত্মহারা মাদারীপুরের মানুষ। দ্রুত পদ্মা সেতুর বাকি কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে অর্থনৈতিকসহ সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে বলে আশা মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।
সান নিউজ/কেটি/এস